অক্টোবর ৯, ২০২৪

পুঁজিবাজারের নিয়ম-কানুনগুলো হঠাৎ পরিবর্তন করার কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের সাধারন বিনিয়োগকারীদের গবেষণা করার সুযোগ না থাকায় তারা বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারীদের গবেষনা বৃদ্ধি করতে হবে। যা বাজার উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত ‘বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারীদের স্থিতিস্থাপকতার মূল বিষয়’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ছামিউল ইসলাম।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেক গবেষণার মাধ্যমে বিনিয়োগ করে থাকেন। আর তাদের গবেষণা মূলত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। কিন্তু আর্থিক প্রতিবেদনগুলোতে অনেক সময় সঠিক তথ্য উপস্থাপিত হয় না। তাই আর্থিক প্রতিদেবনের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এ বাজার বিনিয়োগে তেমন আগ্রহী হচ্ছে না। এজন্য অডিটর, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের নিয়ম-কানুনগুলো হঠাৎ পরিবর্তন করার কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়া মন্দ কোম্পানিগুলোকে শাস্তির পাশাপাশি ভালো কোম্পানিগুলোকেও তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। যার যা কাজ তা সঠিকভাবে পালন করে পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমি সব সময় ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলি। তাই আমি ফ্লোর প্রাইস আরোপের সময় ফ্লোর প্রাইস নিয়ে কথা বলেছি। ফ্লোর প্রাইস থাকলে শেয়ারের প্রাইস কীভাবে নির্ধারিত হবে। এছাড়াও ডিএসইকে আরও ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। বিশেষ করে আইপিওর ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ভাল মানের শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। এজন্য সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগের জন্য ভাল শেয়ার পাবেন। সরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারীগণ উপকৃত হবেন এবং সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ পাবে। এজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাবলিক ইন্টারেস্টের চেয়ে বড় কিছু নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি কিছু গ্রুপের সাথে আলোচনা করেছে। ভাল কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার জন্য কিছু আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। তা না হলে পারিবারিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসবে না।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের পূর্বে বিভিন্ন ঝুঁকিসমূহ বিবেচনা করে থাকেন। এর মধ্যে প্রধান হলো রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নতুন করে অন্ত‍ভু‍র্ক্ত হয়েছে পরিবেশ, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন (ইএসজি) ঝুঁকি। কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি বেশ কিছু ব্লুচিপ কোম্পানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে। পরে আমরা জানতে পেরেছি সেসব বিনিয়োগকারী ইএসজি চার্টারে স্বাক্ষর করেছে। তাই ইএসজি বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। ইনভেস্টমেন্ট রেজিলেন্সের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্যের উপর এক্সেস নিশ্চিত করতে হবে। আর বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে হবে। এছাড়াও আমাদের গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে ক্ষমতায়ন করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য ডিএসইর ক্ষমতায়ন জরুরি। আইপিও এর গুণগতমান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ডিএসইর মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। এছাড়াও বিনিয়োগকারীকে ঋণ দেয়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাজার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমাদের বিবেচনা করে ঋণ দেয় আবশ্যক। তিনি সরকারি কোম্পানিগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষা এবং সচেতনতার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এবারের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় পুঁজিবাজারেও ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। যদিও আমাদের পুঁজিবাজার একটি দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে এসেছে। আমরা এর কাঙ্ক্ষিত কাঠামো তথা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের জন্য একটি আধুনিক এবং সময়োপযোগী আইনগত কাঠামো তৈরি করা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। আমরা যার যার জায়গা থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিশ্চিত করতে চাই। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সংস্কারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ কাঠামো তৈরি করা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজিএম সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ। তিনি বলেন, এই সপ্তাহটি হলো বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা ও সুরক্ষা প্রচার এবং ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ। আমরা আমাদের বাজারে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি। আমরা সুশাসন ও জবাবদিহিতার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো অধিক শক্তিশালীর করার জন্য কাজ করছি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *