দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপও কাজে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়ন ও গতিশীলতা বাড়াতে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে যথাযথ কৌশল নির্ধারণ করে নীতি সহয়তা প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু সুপারিশ ও দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। তাদের মতে, এসব সুপারিশ ও দাবি বাস্তবায়ন হলে আসন্ন বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হবে।
এদিকে পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতিতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (ডিবিএ) ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তার এ নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করবেন। এটা হবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার এবং বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট। এই বাজেট অধিবেশন হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে এই সরকার ক্ষমতায় আসে।
তথ্য মতে, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ৫টি সুপারিশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সুপারিশগুলো হলো- স্টক এক্সচেঞ্জে সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে মূলধনী মুনাফার (ক্যাপিটাল গেইন) ওপর নতুন করে কর আরোপ না করা, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে করপোরেট করহারের পার্থক্য ১০ থেকে ১২.৫ শতাংশ করা, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদ ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর ধার্য উৎসে কর কমানো, উৎসে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা ও লভ্যাংশ প্রাপ্তির প্রথম পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড় দেওয়া এবং তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতি রাখা।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আসন্ন প্রস্তাবিত বাজেটে। সেগুলো হলো- তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, বন্ড থেকে উদ্ভূত আয়কে কর অব্যাহতি দেওয়া, ব্লু বন্ড এবং গ্রিন বন্ডকে সম্পূর্ণ কর অব্যবহৃতসহ কর রেয়াত প্রদান করা, লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মূলধনী লাভের ওপর কর প্রত্যাহার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইটিএফ ইত্যাদি কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমে কর রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধি করা, মূলধনী লাভের ওপর কর কর্তন করা হলে তা চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করা, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড এবং স্মল ক্যাপ বোর্ডে কোম্পানিগুলোকে ১, ২ বা ৩ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান, হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের ওপর সব ধরনের কর প্রত্যাহার এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জকে পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বড় বিনিয়োগকারীরা বাজেট ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা এখন শুধু বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। তাই বাজারে লেনদেন অনেকটা কম। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও তাদের হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। তারা সীমিত আকারে বিনিয়োগ করে চুপচাপ রয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকট। আর লেনদেনের ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় বিক্রির চাপ বেশি থাকায় অধিকাংশ শেয়ারের দর ও বাজার সূচক কমেছে। এছাড়া আসন্ন বাজেটে গেইন ট্যাক্সের ওপর কর আরোপ করা হবে এমন শঙ্কাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কাজ করছে। যার ফলে গত এক মাস ধরে পুঁজিবাজারে ধরাবাহিক পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট প্রয়োজন।