ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

পুজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস (ট্রেক নম্বর- ৭৯) পিএফআই সিকিউরিটিজের স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের (নিবন্ধন সনদ) নবায়ন স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধন সনদ নবায়ন করার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে আবেদন জানালেও তা গ্রহণ করা হয়নি। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) প্রতিষ্ঠানটির ২৮ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বেলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

পিএফআই সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি দীর্ঘ দিনের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হলেও প্রতিষ্ঠানটি তাদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ঘাটতি পূরণ করেনি। এমন পরিস্থিতিতেও বিগত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদ বরাবর পাঠানো বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশন পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের অনুকূলে স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন নবায়ন করার অবস্থানে নেই। কারণ ২১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকের পাওনা হিসাবে ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে ১৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ কারণে নবায়নের যে আবেদন করা হয়েছে তা গ্রহণ করা হয়নি।

জানা গেছে, এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯২০তম কমিশন সভায় পিএফআই সিকিউরিটিজ সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণের জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালকদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধ এবং সকল বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক বছরে তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে। এর পর ২০২২ সালে ২২ মার্চ বিএসইসির জারিকৃত নির্দেশনায়ে ডিএসই ও সিএসই সকল ব্রোকারেজ হাউস তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তসাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এর পর থেকে ১০২টি প্রতিষ্ঠান ৫৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সমন্বয় করে। বাকি ৬টি ব্রোকারেজ হাউজ তাদের ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে পিএফআই সিকিউরিটিজ অন্যতম।

সর্বশেষ চলতি বছরের গত গত ২০ আগস্ট ডিএসইর পরিদর্শন দল মশিউর সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রহক হিসাবে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঘাটতি শনাক্ত করে। ছাড়াও বিভিন্ন গ্রাহকের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা সরিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ গ্রাহকের টাকা অন্য খাতে খরচ হয়েছে। এরপর ২৮ আগস্ট তা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আকারে কমিশনকে জমা দেয় ডিএসই। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ আগস্ট কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগে ব্রোকারেজ হাউজটির কার্যক্রম তদন্ত করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। এ লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজটির ব্যাংক ও বিও হিসাব স্থগিত করা এবং অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত প্রতিস।ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা যেন বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে বিএসইসির কঠোর অবস্থান নেওয়ার অংশ হিসেবে- গত ১৫ নভেম্বর সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকায় পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের লেনদেন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই। বিএসইসি’র আইন অনুসারে, যেকোনো সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা থাকতে হবে। কিন্তু সাবভ্যালি সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বর্তমানে ঘাটতি রয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ২৬ হাজার ৪০১ টাকা। ফলে গ্রাহক হিসাবে ঘাটতির কারণে বিএসইসির সম্মতিকে ব্রোকারেজ হাউজটির লেনদেন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গত ৭ নভেম্বর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৩০তম কমিশন সভায় সমন্বিত গ্রাহক হিসাব ঘাটতি থাকায় দেশের পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত মধ্যস্থতাকারী দুই ব্রোকারেজ হাউজ প্রুডেনশিয়াল সিকিউরিটিজ ও এনএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এছাড়া গত ১০ সেপ্টেম্বর সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ৬২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ঘাটতি থাকায় এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। গত ৫ জুলাই ডিএসইর একটি পরিদর্শন দল ব্রোকারেজ হাউজটির গ্রাহক পাওনা অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ৬২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ঘাটতি পায়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়।

পিএফআই সিকিউরিটিজের বিষয়ে নিশ্চিত করে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সবশেষ যে ঘাটতি দেখা গেছে সেটা তারা পূরণ করেছে কিনা সে বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তাই ঘাটতি থাকায় তাদের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি।

এদিকে পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...