পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে ‘আশপাশের সন্ত্রাসীদের’ যোগাযোগ রয়েছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, পাহাড়ের ওই সশস্ত্র দলকে নির্মূলে সরকার ‘বদ্ধপরিকর’।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর পাড়ে ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
গত কয়েক দিনে বান্দরবানে রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি, অর্থ ও অস্ত্র লুট, অপহরণ এবং গোলাগুলির ঘটনায় কেএনএফকে দায়ী করা হচ্ছে, যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
এই সশস্ত্র সংগঠন বিদেশি সহযোগিতা নিয়ে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে মুক্ত করা হয়েছে।’
ওই সংগঠনের সঙ্গে ‘আশপাশের সন্ত্রাসীদের’ যোগাযোগ আছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে যারা ঘটিয়েছিল, তাদের অস্ত্রশস্ত্রও তাদের (কেএনএফ) কাছে এসছে বলে জানা গেছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে এবং তাদেরকে নির্মূল করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করে। টাকার পাশাপাশি পুলিশের অস্ত্রও লুট করে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীন তখন রামু উপজেলা পরিষদ এলাকায় মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ছিলেন। হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে তাকে অপহরণ করে।
পরদিন দুপুরে রুমা থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলা সদরে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে তিনটি গাড়িতে আসা একদল সশস্ত্র লোক।
এ নিয়ে দুই উপজেলার মানুষের ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করে র্যাব। এ খবর আসার পরপরই থানচিতে পুলিশ ও সশস্ত্র লোকদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক গোলাগুলি হয়।
সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে বিএনপিরও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘হরর সিনেমা যখন দেখা হয়, তখন দেখা যায় যে, দৈত্য মানুষ পোড়ায়, আবার সেই পোড়া মানুষের মাংস খায়।’
‘বিএনপি যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করেছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারা তো দৈত্য। হরর মুভিতে দেখা এসব বিএনপির বেলায়ও প্রযোজ্য। হরর মূভির মত বিএনপি একটি রাজনৈতিক দৈত্যের দল।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য তারেক জিয়াই যথেষ্ট, আর কাউকে লাগবে না। যতদিন তারেক জিয়া তাদের নেতা থাকবে বিএনপির ততদিন কোনো সম্ভাবনা নাই।’
বাজার ‘অস্থিতিশীল’ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিল মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের এই ডাকে দেশের কেউ সাড়া দেইনি, এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীরাও সাড়া দেইনি। বাজার আমরা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। অনেক পণ্যের দামও কমেছে।’
‘একটি দৈত্য সবকিছু খেয়ে ফেলতেছে’- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ মন্তব্যের বিষয়েও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং মজুদদার চেষ্টা করেছিল বাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য। এবং সেটির সাথে যুক্ত হয়েছিল বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক। ’
‘ঈদ সামনে রেখেও সবসময় বাংলাদেশে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়। সেটিকেও কঠোরহস্তে দমন করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।’
তিনি বলেন, ‘এইক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমি গণমাধ্যমকে অনুরোধ জানাব, রমজানের সময় যে বাজার মোটামুটিভাবে স্থিতিশীল আছে এবং কিছু কিছু পণ্যের দামও যে কমেছে, সেটিও প্রচার করা দরকার।’
‘কোনো পণ্যের দাম বাড়লে গণমাধ্যমে সেটি যেমন প্রচারিত হয়, কোনো পণ্যের দাম কমলে সেটাও প্রচার করা দরকার।’