দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভূক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল টি’র পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাজধানী ঢাকায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, ন্যাশনাল টি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবিরকে শিগগিরই অপসারণ করা প্রয়োজন। এছাড়া বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত–উল ইসলামের সময়কালে নিয়োগ পাওয়া স্বতন্ত্র পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, মিজানুর রহমান খান ও রাজিয়া বেগমকে অপসারনের দাবি জানান তারা।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কোম্পানি পরিচালক অর্থপাচারকারী চৌধুরী নাফিজ সরাফতসহ আরেক দুর্নীতিবাজ পরিচালক আতিফ খালেদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত ও অপসারন করতে হবে। পাশাপাশি চৌধুরী নাফিজ সরাফতের প্রধান সহযোগী অর্থ পাচারকারী কেরামত আলীকে অপসারন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
এছাড়া অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও চাকরি চুক্তি বাতিলকৃত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পুনর্বহাল করার দাবি জানান তারা।
জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়। ফলে ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে তিনি সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে শেখ কবির তার নিজের জেলা গোপালগঞ্জের পাঁচজনকে পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এই পরিচালকরা হলেন- মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আবুল হোসেন, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, এম আতিফ খালেদ ও মিজানুর রহমান খান।
সূত্র বলছে, ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহিদুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজিয়া বেগম। পরবর্তীতে গত বছরের মার্চে সাবেক বিভাগীয় বিশেষ জজ মিজানুর রহমান খানকে ন্যাশনাল টি-তে মনোনয়ন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতের নির্দেশনায় তিন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ পান।
এদিকে নানান কর্মে সমালোচিত-বিতর্কিত চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ফিনেক্স সফটওয়্যারের প্রতিনিধি হিসেবে কোম্পানিটিতে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে টাকা লুটপাটের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এছাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানির সিএফও কেরামত আলী একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে দুর্নীতি ও লুটপাট করেন বলে অভিযোগ তুলেছে আন্দোলনকারীরা।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ন্যাশনাল টি বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। গত পাঁচ বছরে ধরে নানান অনিয়মে বড় লোকসান গুনছে কোম্পানিটি। সবশেষ ২০২৩ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৯৬ টাকা। এমনকি চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১০৪ টাকা লোকসান গুনেছে।