ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

দেশে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে প্রচলিত বিভিন্ন মূল্যমানের টাকার (মুদ্রা) ব্যবহারগত পদ্ধতির কারণে স্থায়িত্ব কমছে। ফলে কয়েক মাস না যেতেই ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে কাগুজে নোট। এতে প্রতিবছরই সরকারকে নতুন নোট ছাপাতে হয়। তাতে প্রতি বছর টাকা মুদ্রণে খরচ হয় ৩৮৪ কোটি টাকা। এই খরচ কমিয়ে আনতে ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সার্বজনীন ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়ন করতে হলে ডিজিটাল পেমেন্টে জড়িত সব ব্যাংক, পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডার (পিএসপি), পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডার (পিএসও) ও এমএফএসসহ স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে এক সভার আয়োজন করা হয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইসিটি সেল ‘ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়ন’ সংক্রান্ত ওই সভার আয়োজন করে। এ সময় ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হককে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সভার কার্যবিবরণী পর্যালোনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।

সরকার আশা করছে, ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়ন হলে নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিস্ট এই খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে সহজে আয়-ব্যয়ের হিসাব ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। ফলে আয়কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা কমে আসবে এবং মানিলন্ডারিং অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ‘ ভিশন, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে আনয়নের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকেও ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ জানুয়ারি সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইসিটি সেল কর্তৃক ‘ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়ন’ সংক্রান্ত এক সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় ক্যাশলেস বাংলাদেশের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক। এতে ক্যাশলেস লেনদেন কী, এর উপকারিতা ও ঝুঁকি, ক্যাশলেস লেনদেনের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

সভায় বলা হয়, বর্তমানে দেশে ডিজিটাল পেমেন্ট করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যেমন কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড, এমএফএস এবং মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ডিজিটাল পেমেন্ট সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশে শহরভিত্তিত কিছু বড় দোকান ও মার্চেন্ট আউটলেট রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সেবার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকলেও দেশের বেশিরভাগ স্থানে ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি বা পর্যাপ্ত অ্যাকসেস পয়েন্ট নেই। ফলে ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি’র অধিকাংশ ই-মানিকে পুনরায় নগদে রূপান্তর করে লেনদেন করতে হচ্ছে। সব ধরনের পেমেন্টের ক্ষেত্রে ই-মানি ব্যবহার করা গেলে এ ধরনের কনভারসন প্রয়োজন হতো না। এমন অবস্থায় ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়নে যে বিষয়গুলো বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে পরিষেবা দানকারীর সক্ষমতা, সেবাদানকারীদের মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটি ও ডিজিটাল পেমেন্ট করার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাকসেস পয়েন্ট তৈরি। এছাড়া ডিজিটাল লেনদেনের বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও প্রয়োজন।

মেজবাউল হক বলেন, ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়নে দেশব্যাপী সব স্থানে ডিজিটাল অ্যাকসেস পয়েন্ট তৈরিতে বিশেষভাবে জোর দিতে হবে। এসব পয়েন্ট ব্যবহার করে ক্যাশলেস লেনদেনে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। দেশের সব হাট-বাজার, দোকান ও অন্যান্য স্থানে ক্যাশলেস লেনদেনের ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্যাশলেস লেনদেনকারী ব্যবসায়ী ও সেবাগ্রহীতাদের প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...