শিগগিরই আরেক দফা সুদহার কমাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। সম্প্রতি ফেড পর্ষদের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার এক অনুষ্ঠানে সুদ হ্রাসের এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ক্রিস্টোফার ওয়ালার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ধীরে ধীরে ফেডের দীর্ঘমেয়াদি ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার দিকে নেমে আসছে। সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ; অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ফেড মনে করছে, অক্টোবরে সামান্য বাড়লেও সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ধারায় আছে। খবর রয়টার্স।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে তেলের দাম বেড়ে যায়। তার জেরে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে তা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুতগতিতে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে ফেড। ফলে নীতি সুদহার দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়।
এরপর মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার দিকে নেমে আসতে শুরু করেছে, এই বিষয়ে ফেড নিশ্চিত হওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হ্রাস করা হয়। এরপর অক্টোবরে আরেক দফা কমানো হয় সুদহার। ওই সময় সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্টে কমিয়ে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সীমার মধ্যে নামিয়ে আনা হয়। মূলত মহামারি-পরবর্তী সময়ে মুদ্রানীতির রাশ আলগা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সুদহার কমানোর এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নভেম্বরেও নীতি সুদহার আরেক দফা কমানো হয়।
ক্রিস্টোফার ওয়ালার বলেন, চলতি মাসে সুদহার কমানোর পক্ষপাতী তিনি। যদিও সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে ফেড কী সিদ্ধান্ত নেবে। যদি মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী ও অন্যান্য শর্ত ঠিক থাকে, তবে ফেড ঋণের খরচ কমাতে পারে।
এদিকে নির্বাচনে জয়ের পর আমদানিতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনীতিবিদদের একাংশের আশঙ্কা, এ ধরনের পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতিতে স্বল্পমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
সুদহার কমানোর পদক্ষেপ মার্কিন ভোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। এতে ঋণ ও বন্ধকি খরচ কমে। ঘরবাড়ি কেনা বা ঋণ নেওয়া আগের তুলনায় সহজ হয়। সহজ ঋণ বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোয় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের খরচ কমবে। তবে মসনদে বসে কর কমানো, শুল্ক বৃদ্ধি ও শরণার্থীদের নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ট্রাম্প। তাঁর সিদ্ধান্তের জেরে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়তে পারে। তখন ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক লাখ কোটি ডলার ঋণ নিতে পারে। এতে ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে সরকারের সংঘাত তৈরির শঙ্কা আছে। এ ছাড়া ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, ফেডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা থাকা উচিত। অর্থাৎ ফেডের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন তিনি।