জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে আজ বুধবার সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি করা হবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় আইনগত মতামত দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। আজ এই প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা থাকবে তাদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
গতকাল সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াত-শিবিরকে বুধবারের মধ্যে নিষিদ্ধ করা হবে। এ ব্যাপারে তিনি উল্লেখ করেন, নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে (আইনমন্ত্রী) নির্দেশ দিয়েছেন বুধবারের মধ্যে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার।
সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী বলেন, যাঁরা কোটা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরা কিন্তু বলেছেন, এই সহিংসতার সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সরকারের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে জামায়াত, বিএনপি, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা (সহিংসতা) করেছে। দলটিকে (জামায়াত) যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।
গতকালই বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সভা। বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবারই জঙ্গি উত্থান বলুন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলুন, এগুলো করে যাচ্ছে তারা (জামায়াত-শিবির)। কাজেই এ নিয়ে ১৪ দলের বৈঠকে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য যেসব প্রক্রিয়া হওয়া দরকার, সেগুলো চলছে।’
প্রসঙ্গত, আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হলেও পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।
এখন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, বিষয়টিও তাঁরা এগিয়ে নেবেন। তিনি গতকাল বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ করেছে। সেই সময়ের দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচার করার ব্যাপারেও সরকার এখন উদ্যোগ নেবে। সে জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত করার জন্যও তাঁরা পদক্ষেপ নেবেন।