ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও শরণার্থীদের কারণে বাংলাদেশে নানান ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সেই কারণে রাখাইনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন শরণার্থী যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে সর্তকতা অবলম্বন করা হয়েছে। অবৈধ প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ব্রিটিশ সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে আমাদের এখানে নিরাপত্তা সমস্যা, পরিবেশ সমস্যা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো উগ্রবাদের সূতিকাগার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাসী দলগুলো সেখান থেকে রিক্রুট করার চেষ্ঠা করে এবং অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে। সুতরাং এখানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ একটি জনবহুল দেশ। আমরা ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা বাস্তচ্যুতদের কারণে ভারাক্রান্ত। প্রতিবছর ৩৫ হাজার করে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মানবিকতার কারণে তখন আমরা রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছিলাম। আমরা মনে করি যে মিয়ানমারে পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমে এই সমাধান করা সম্ভব। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন হচ্ছে একমাত্র সমাধান জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, রাখাইন প্রদেশে, সেটি আজ থেকে নয়। বেশ কিছুদিন ধরে এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলছে। আমাদের সীমান্তরক্ষীরা সেখানে অনেক আগে থেকেই সদা অ্যালার্ট আছে এবং সেখানে কিছুদিন পরপর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আমরা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি জানিয়ে তিনি বলেন, উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি নেতিবাচক প্রভাব আছে। তবে আমরা সবসময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যদি মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।

গত শুক্রবার ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস গাজায় সংঘটিত গণহত্যা বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে এবং এটিকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিজে গতকাল রায় দিয়েছে এবং এই রায়কে স্বাগত জানাই। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার আপিলকে ইতিপূর্বে সমর্থন জানিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি এই রায় ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা হচ্ছে– যেটি আইসিজের রায়ে বলা হয়েছে এবং গণহত্যা বন্ধের কথা বলা হয়েছে। আমি মনে করি এই রায়ে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সেটি বন্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যদি আরও সমর্থন যোগাতে হয়, বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের সম্পর্ক যাতে আরও গভীর করা যায় সেই বিষয়ে ব্রিটিশ  এমপিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা আলোচনা হয়েছে। 
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশী ডায়াসপোরা বিনিয়োগের সামর্থ্য রাখে। বিনিয়োগ বাড়াতে তাদের কাজে লাগানোর বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষিতে যান্ত্রিকরণের হার বেড়েছে। হালের বলদের মাধ্যমে কৃষিজমি চাষ এখন নেই বললেই চলে। আর ফসল মাড়ানীর ক্ষেত্রে কৃত্রিম পদ্ধতি তো বাদই দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ এমপিদের সঙ্গে আলাপে কৃষির যান্ত্রিকিকরণ, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে দুই দেশ কিভাবে কাজ করতে পারে, সে কৌশল নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে।

বিট্রিশ এমপি বিরেন্দ্র শার্মা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের সাথে থাকতে চাই। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় আমরা উন্নয়ন অংশীদার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে একযোগে কাজ করতে চাই। একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সাথে দাতব্য কাজকর্ম চালিয়ে নিতে চাই। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চাই। শর্মা আরও বলেন, এটা প্রথম সফর না, এধরণের বহু সফর আগেও হয়েছে।
সফরের মাধ্যমে কিভাবে দুই দেশের সর্ম্পককে গভীর ভাবে কাজ করা যায়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক দিয়েই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চাই। তিনি আরও বলেন, ডায়াসপোরা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা চেষ্টা করলে বাংলাদেশে বাণিজ্য আরও বাড়তে পারে।

পার্লামেন্ট মেম্বার অব ব্রিটেনের পাউস কলি বলেন, বর্তমানে বৃটেনে ৫ লাখের মতো বাংলাদেশী বসবাস করে। সেখানকার বাংলাদেশী উৎদোক্তারা বেশ ভালো। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহী করার চেষ্টা চলছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...