জুন ২৯, ২০২৪

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে গুণগত মান সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তি করার প্রত্যাশা রেখেছে। এছাড়া লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার করাসহ ১০টি প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

রোববার (২ জুন) সিএসই’র চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে আসন্ন ২০২৪-২০২৫ বাজেট পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় প্রতিষ্ঠানটি এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। সিএসই থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম । এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিএসইর পরিচালক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম, মোহাম্মাদ নকিব উদ্দিন খান, মোহাম্মেদ আখতার পারভেজ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এম সাইফুর রহমান মজুমদার । এ সময় সিএসইর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন ।

সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম আসন্ন বাজেট নিয়ে মূল বক্তব্য প্রদান করেন । তিনি বলেন, আগামী ৬ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। আমরা আশাকরি, চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সমূহ বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় অর্থমন্ত্রী একটি টেকসই ও গতিশীল বাজেট উপস্থাপন করবেন। একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বাজার কাঠামো তৈরী করার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ উপস্থাপনের প্রাক্কালে আমরা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল বাজেট কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনাদের মাধ্যমে সরকারের নিকট উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করছি।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় বাজেট আমাদের দেশের জন্য শুধুমাত্র একটি বাৎসরিক আয় ব্যয়ের হিসাব নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত দিক নির্দেশনাও বটে। বর্তমান সরকারের কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিতকরন এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নিতকরনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য একটি যথোপযুক্ত অর্থ বাজার কাঠামো তৈরি করা খুবই গুরুত্বপুর্ণ । একটি টেকসই বাজার কাঠামোর জন্য অর্থ বাজার, পুঁজিবাজার এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাঠামোর একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের আর্থিক বাজার কাঠামো কার্যত অনেকাংশে ব্যাংকব্যবস্থা তথা অর্থবাজারের উপর নির্ভরশীল । যার বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে । আগামী বছরের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের গুণগত সম্প্রসারণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য যথাযথ কৌশল নির্ধারণ করে দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে ।

সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম যেসব প্রত্যাশা তুলে ধরেন:

১। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি করন: বর্তমানে ৩৪৯ টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য গুণগত মান সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা একটি সন্তোষজনক সংখ্যায় উন্নীতকরন করা প্রয়োজন।

২। একটি কার্যকর কর্পোরেট বন্ড মার্কেট চালুকরণ: দেশে ক্রমবর্ধমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের লক্ষ্যে একটি স্থিতিশীল শক্তিশালী বন্ড মার্কেট অতীব জরুরী। একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গঠন ও নতুন বন্ডের তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্যতা আনয়নের নিমিত্তে বন্ড হতে উদ্ভুত আয়কে কর অব্যহতি প্রদান করা প্রয়োজন।

৩। মার্কেট ক্যাপ জিডিপি রেশিও বৃদ্ধিকরণ: বাংলাদেশের অর্থনীতি সমসাময়িক peer কান্ট্রিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে মার্কেট ক্যাপ – জিডিপি রেশিও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন । যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে স্থানীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করার একটি প্যারামিটার হিসেবে বিবেচিত হয়।

৪। পুঁজিবাজারের জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারী ও বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ: বর্তমানে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে দক্ষ বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্কট রয়েছে । পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কম। এই সংখ্যা একটি কাংখিত স্তরে উন্নিত করা প্রয়োজন ।

৫। পুঁজিবাজারের পন্য বৈচিত্র্যকরণ: বর্তমান পুঁজিবাজার শুধুমাত্র ইকুইটি মার্কেট নির্ভর। যার ফলে বাজারে যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয় তেমনি এটি পুঁজিবাজার সম্প্রসারণের অন্তরায়। এই লক্ষ্যে কার্যকর কৌশলের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।

সিএসই’র অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো— তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হারের ব্যবধান নূন্যতম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, বন্ড থেকে উদ্ভূত আয়কে কর অব্যাহতি দেওয়া, ব্লু বন্ড এবং গ্রীন বন্ডকে সম্পূর্ণ কর অব্যহতি সহ কর রেয়াত প্রদান করা , লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মূলধনী লাভের উপর কর প্রত্যাহার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইটিএফ ইত্যাদি কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কীমে কর রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধি করা, মূলধনী লাভের উপর কর কর্তন করা হলে তা চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করা, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড এবং স্মল ক্যাপ বোর্ডে কোম্পানিগুলোকে প্রথম ২ বা ৩ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান, হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর উপর সকল ধরনের কর প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রদান, কমোডিটি এক্সচেঞ্জকে পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *