

দেশে এক কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা বর্তমানে দুই লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে গত ১৪ বছরে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, শুধু ব্যাংকিং খাতেই গত সাড়ে ১৪ বছরের ব্যবধানে কোটিপতির সংখ্যা সাড়ে ৪ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্যাংকিং খাতের বাইরেও দেশে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। যাদের অর্থ হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পরিসংখ্যান পর্যলোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে এক কোটি টাকার অধিক হিসাবধারীর (আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা) সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৯। এর মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার ৩২০ জন কোটিপতি বেড়েছে গত সাড়ে ১৪ বছরে। সে হিসাবে বছরওয়ারি গড়ে কোটিপতি বেড়েছে ১৪ হাজার ১৬০ জন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, এটা শুধু রেকর্ডকৃত সংখ্যা, এর বাইরেও অসংখ্য কোটিপতি রয়েছেন এবং যাদের অর্থের কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।
২০০৯ সালের শুরুতে ব্যাংক খাতে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৩৬৯ জন। গত সাড়ে ১৪ বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে কোটিপতি বেড়েছে সাড়ে চারগুণের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে এক কোটি টাকার অধিক আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ জন। গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন। অন্যদিকে গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে এক কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫ জন। গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে এক কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন।
ব্যাংকভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে (ইসলামিক ব্যাংকসহ) কোটিপতির (আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা) সংখ্যা বেশি। প্রায় আড়াই লাখ কোটিপতির মধ্যে এক লাখ ৯২ হাজার ৭৫৩টি হিসাবধারীই রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৯২০ জন এবং এক কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা এক লাখ ১৩ হাজার ৮৩৩ জন। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোতে কোটিপতির সংখ্যা ৬২ হাজার ৭৮০ জন (আমানতকারী ২০,৩৮৩ জন ও ঋণগ্রহীতা ৪২,৪৯৭ জন)।
অন্যদিকে দেশের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে কোটিপতির (আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা) সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৪০ জন। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৬৮ জন এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৭২ জন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেশী। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৬৩টি। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫১০ জন এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৪ হাজার ৫৩ জন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩ হাজার ৭৩৩টি। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬ জন এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৬৭৭ জন।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে ইনফরমাল ইকোনমি বেশ বড়। এই ইকোনমির হিসাব কারো কাছে খাতা-কলমে নেই। ফলে ইনফরমাল ইকোনমিতে লুকিয়ে আছে অসংখ্য কোটিপতি।