প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপের (পিএমএফ) ফেলোসহ উচ্চ-টপশিক্ষার্থীদের দেশের ব্যাপক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যে দেশি ও বিদেশী শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের সঙ্গে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাভাবনা প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চিকিৎসা-বিজ্ঞানে গবেষণা খুবই কম। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমাদের আরও গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে ও আজকের তরুণরাই হবে স্মার্ট দেশ গড়ার সৈনিক। দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না।
বিশ্বব্যাপী শীর্ষ র্যাংকিংয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জনের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আয়োজিত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১০ জনকে পিএইচডি ফেলোশিপ ও ৩৮ জনকে মাস্টার্স ফেলোশিপ হস্তান্তর অন্ষ্ঠুানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা কখনই অন্যের মডেলের ওপর নির্ভর করবো না। দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে আমরা নিজস্ব মেধা ও চিন্তার প্রয়োগ ঘটাবো। তিনি বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, জলবায়ু, প্রাকৃতিক পরিবেশ, দেশবাসীর মানসিকতা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যে ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমত আমাদের দেশকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং অনুভব করতে হবে যেখান থেকে আপনি জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করতে আপনাকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জ্ঞানের সাথে দেশের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করার জ্ঞানকে সমন্বয় করতে হবে যা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি খাতে উন্নয়নের জন্যে সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সঠিক পরিকল্পনা যে দেশকে সার্বিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা গত সাড়ে ১৪ বছরে তাঁরা প্রমাণ করেছেন।
শেখ হাসিনা জনগণের অর্থে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে জনগণ ও দেশের কল্যাণে কী অবদান রাখছেন- তা সবসময় ভেবে দেখতে পিএমএফ ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিদেশী উচ্চ শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে আপনারা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কী করছেন- তা মনে রাখবেন। এই সব ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী, কারণ তারা বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের ছেলে-মেয়েদের বলতে চাই যে- তোমরা প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি সুযোগকে কাজে লাগাও। বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমাদের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। আমরা পিছিয়ে পড়তে চাই না।
মেধাবীদের দেশের মশাল বাহক আখ্যায়িত করে- তিনি বলেন, আমি মনে করি- মেধাবীরা তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি ও উন্নতি সম্ভব নয়।
২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৮৮,১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে- তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য ফেলোশিপ প্রদানসহ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাঁর সরকার মেরিটাইম, অ্যারোস্পেস, এভিয়েশন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করেছে। তাঁর সরকার গবেষণা ও বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং উচ্চশিক্ষার্থীদের গবেষণায় গুরুত্ব দিতে বলেন। গবেষণার মাধ্যমে তারা দেশের খাদ্যকে পর্যাপ্ত করে তুলেছেন।
বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্যে এ পর্যন্ত ২৭৭ জনকে মাস্টার্স এবং ১০৮ জনকে এই পিএইচডি ফেলোশিপ দেয়া হয়েছে। এই বৃত্তি পেতে হলে প্রত্যেক আবেদনকারীকে আগে নিজ যোগ্যতায় বিশ্বের ১শ’ র্যাংকিংয়ের মধ্যে থাকা যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হয়।