দেশের প্রথম ও প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেড ৭০ বছরে পদর্পণ করেছে। ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড নামে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তবে আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৬২ সালের ২৩ জুন নাম পরিবর্তন করে ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড করা হয়। ১৯৬৪ সালের ১৩ মে ওই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ডিএসইতে লেনদেন স্থগিত রাখা হয়। ১৯৭৬ সালের ১৬ আগস্ট লেনদেন পুনরায় চালু হয় এবং অদ্যাবধি লেনদেন ও উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
দ্যা বিজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ডিএসইর গৌরবের ৭০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শুভেচ্ছা দূত ও বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দ্যা বিজকে বলেন, যে দেশের পুঁজিবাজার যত শক্তিশালী হবে, সে দেশের অর্থনীতি তত বেশি সমৃদ্ধশালী হবে। পুঁজিবাজার যদি ভাল থাকে তাহলে দেশের অর্থনীতিও ভাল থাকবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ বাড়বে। তাই দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধে ডিএসইকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর বাংলাদেশকে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে খেলার মাঠে যখনই একতা বজায় রেখে আমরা এগিয়ে গেছি, জয় নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরেছি। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ করতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের গৌরবের ৭০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিচালক জাভেদ এ মতিন দ্যা বিজকে বলেন, পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হিসাবে অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী পুঁজিবাজার অপরিহার্য। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেশ ও বিদেশে রোড শো আয়োজনের মাধ্যমে অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিকট তুলে ধরছে। বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। সহজ ও দ্রুততার সাথে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। ভবিষ্যতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে আরও উন্নত একটি প্রতিষ্ঠানে দেখবো এই প্রত্যাশা করছি।
ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী দ্যা বিজকে বলেন, ডিএসইর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারায় আসলেই আমি অনেক গর্বিত। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার ৩০ বছরের সম্পৃক্ততা আছে। তাই, ভালো লাগার বিষয়টা অনেক বেশি। আমি মনে করি, আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জ আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অন্যান্যা দেশের মতো প্রোডাক্ট-সমৃদ্ধ স্টক এক্সচেঞ্জ হওয়া দরকার ছিল। এটা করতে পারলেই আমাদের সার্থকতা হবে।
ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও শহিদুল্লাহ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন দ্যা বিজকে বলেন, ডিএসইর ৭০ বছর পদার্পণকালে আমি ডিএসইর একজন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এটা নিজের জন্য খুবই গৌরব ও আনন্দের। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গত ৭০ বছরে ডিএসইর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় ডিএসই তথা পুঁজিবাজার আরও এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, সেটা হয়ে উঠেনি। প্রত্যাশা করছি, সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আগামীতে একটি পূর্ণাঙ্গ পুঁজিবাজার দেখতে পাব।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আল আমিন দ্যা বিজকে বলেন, সুদীর্ঘ পথ পারি দিয়ে ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বর্তমানে একটা অবস্থানে এসেছে। এখন শুধু ইক্যুইটি বাজার নয়, বন্ড বাজারসহ আরো নতুন নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। যা অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি, সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে কোন প্রতিষ্ঠান নেই, তাই সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বৃহৎ শিল্পের সংযোজনের মাধ্যমে অর্থনীতির অন্যতম গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় ডিএসইকে দেখার প্রত্যাশা করছি। সকল অংশীজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি গতিশীল, স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান হিসাবে ডিএসইকে দেখবো সেই প্রত্যাশাসহ শুভকামনা রইল।