ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপির এই সমস্যা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এটি চলে আসলেও এই সমস্যার সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। দায়িত্ব নিয়েই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, নতুন করে এক টাকাও খেলাপি হবে না। তবে ব্যাংক খাতের সেই খেলাপি ঋণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও খেলাপির সমস্যা নিয়ে নির্দিষ্ট কিছুই বলেন নি অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের মতো বড় সমস্যা নিয়ে টু শব্দটিও করেনি। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের অন্যান্য সমস্যার বিষয়ও তিনি সযত্ন এড়িয়ে যান। ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে তার বক্তব্য মূলত ডিজিটাল ব্যাংকিং ও ক্যাশলেস লেনদেনের মধ্যেই সীমিত ছিল।

আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি। দায়িত্ব নেওয়ার পরে একই মাসের ১০ জানুয়ারি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তখন তিনি বলেন, আজকের পর থেকে এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। সেটাই ছিল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর খেলাপি ঋণ বিষয়ে তাঁর প্রথম বক্তব্য। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে তিনি বারবার কথা বলেছেন। তবে তার কথাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপি কমে নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। ব্যাংকগুলো এখন নিজেই নিজেদের ঋণ পুনঃতফসিল করছে। ফলে ব্যাংক চাইলেই খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। তাই খেলাপি ঋণের এ তথ্য প্রকৃত চিত্র নয়। বাস্তবে খেলাপি ঋণ আরও বেশি হতে পারে।

অনেক ব্যাংক ঋণ আদায় করতে না পেরে তারল্য সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও তদারকব্যবস্থা, সুশাসনের অভাব, সংস্কারের অভাব, উচ্চ হারের খেলাপি ঋণকে ব্যাংক খাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদরা। খাতটির এমন সমস্যা সমাধানে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে বিভিন্ন সময়ে জানা যায়। ঘোষণা ছাড়া কমিশন গঠনের আর কোন অগ্রগতি দেখা যায় নি। আসন্ন বাজেটেও ব্যাংক খাতের অনেক কিছুতেই চুপ ছিলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়েও তিনি কিছুই বলেননি।

এদিকে একদিনই আগেই খবর প্রকাশ হয়েছে, আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিস বাংলাদেশের ৭টি ব্যাংকের রেটিং মান বা ঋণমান কমিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদসহ অনেকেই আশা করেছিলেন, ব্যাংকিং খাতের সংকট উত্তরণে অর্থমন্ত্রী বাজেটে কিছু দিকনির্দেশনা দেবেন। তবে তিনি এসব বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...