ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখা ২০ হাজার ভিসা প্রত্যাশীর পাসপোর্ট আটকে আছে দেশটির বাংলাদেশস্থ দূতাবাসে। মূলত দূতাবাসের লোকবল সংকটের কারণেই আটকে রয়েছে এইসব পার্সপোট। এতোদিন লোকবল সংকটের বিষয়টি কখনও সামনে আনেনি দূতাবাসটি। শেষ পর্যন্ত পাসপোর্ট জমাদানকারীদের আন্দোলনের মুখে দূতাবাসের সীমাবদ্ধতার সামনে আসে। এর মধ্যেই পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার দাবিতে পূর্বনির্ধারিত অনশনের কর্মসূচি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের জন্য পালন করতে পারেনি আন্দোলনকারীরা।

ইতোপূর্বে বাংলাদেশের ইতালির দূতাবাস ভিসা প্রক্রিয়া দেরি এবং পাসপোর্ট জমা রাখার বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবালের ওপর দায় চাপাতো। রবিবার পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ভিএফএস এর সামনে গণঅনশনে বসার ঘোষণা দেন ইতালির ভিসা প্রত্যাশী বাংলাদেশিরা।
জানা গেছে, গত কিছুদিন ধরেই জমা দেওয়া পাসপোর্টের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে রবিবার গুলশানের ভিএফএস গ্লোবালের অফিসের সামনে গণঅনশনের জন্য জমায়েত হওয়ার কথা ছিল। তবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার গণঅনশন করতে পারেননি তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার ভিএফএস গ্লোবালের অফিসের সামনে গণঅনশনের উদ্দেশ্যে ইতালি গমনেচ্ছু কর্মীরা গুলশান লেকপাড়ে জমায়েত হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিএফএস গ্লোবালের অফিসের সামনে গিয়ে গণঅনশন করা। তবে পুলিশি বাধায় সেটা করতে পারেননি তারা।
পুলিশের পক্ষ থেকে কর্মীদের জানানো হয়, কর্মীরা ভিএফএস গ্লোবালের অফিসের সামনে গিয়ে গণঅনশন করতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যে চারজনের একটি প্রতিনিধিদলকে গুলশান থানায় যেতে বলা হয় এবং থানায় এসব কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ভিএফএস অফিসের সামনে উপস্থিত সায়েদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, দুই বছর আগে তিনি ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত ভিসা ও পাসপোর্ট কোনটাই ফিরে পায়নি। আবির হোসেন নামের আরও একজন ভিসাপার্থী জানান, সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর ইতালিতে কাজে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পার হওয়ার পরও পাসপোর্ট পায়নি। অথচ আমার সৌদিআরবের ভিসা এখন রয়ে গেছে। ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্নে এখন আমার আম-ছালা দুটোই গেল। সায়েদুল ও আবিরের মতো কয়েকশ বাংলাদেশী পূর্বঘোষণা অনুসারে জড়ো হয়। কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের কারণ কর্মসূচি পালন করতে পারেনি তারা। বিক্ষুব্ধরা বলেন, ভিসা চাই না, পাসপোর্ট দেন। ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন আমাদের শেষ হয়ে গেছে।

ইতালিতে লোকবল নেওয়ার পর থেকেই ভিএফএসের মাধ্যমে আবেদন জমাদান বাড়তে থাকে। সবাই চেয়েছে বৈধভাবে ইতালিতে গিয়ে কাজ করবেন। মূলত ভিসা প্রত্যাশীরা ঢাকা সিলেট এবং চট্টগ্রামে ভিএফএসের এপয়েনমেন্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দেন। প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দেওয়ার পর তাদের ভিসা ও পাসপোর্ট ফিরে পায়নি বলে অভিযোগ তাদের। সম্প্রতি ইতালির ভিসা পেতে কেন দেরি হচ্ছে এমন প্রশ্নে ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেন, মূলত পাঁচ কারণে ভিসা দিতে দেরি হচ্ছে।

প্রথম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভিসা আবেদন পেতে জমা দেয়া পাঁচটি নুলাস্তার মধ্যে একটি সঠিক নয়। এটি যাচাই বাছাই করতে সময় দরকার হয়। বিগত বছরে জুলাইয়ের পর আবেদনের সংখ্যাটা এতোটাই বাড়ে যে আমাদের লোকবল এটি সামাল দিতে পারছে না। এটিই ভিসা প্রক্রিয়ার দেরি হওয়ার বড় কারণ।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, মূলত মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে মিথ্যা স্বপ্ন দেখান প্রবাসীদের। এছাড়া ইতালিতে কাজের ভিসা পাশাপাশি অন্যান্য ভিসার চাপও বেড়েছে। এসব প্রক্রিয়া সহজ করতে ইতালি সরকারকে কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান।

ইতালি দূতাবাসে আর কতোদিন আটকে থাকবে পাসপোর্ট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি দুঃখিত দেরি হবার জন্য। এখানে ভিএফএস গ্লোবালের কিছু করার নেই। ভিসা আবেদনকারীরা যতোই আন্দোলন করুক এটি দূতাবাসের সমস্যা। প্রতিদিন ১০০ বেশি পাসপোর্ট দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...