আসছে পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবার ২০ অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসবে ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট, আর উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবে ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট।
এছাড়া, উত্তর সিটির গাবতলী ও দক্ষিণ সিটির সারুলিয়া এই ২টি স্থায়ী হাটেও কেনা-বেচা হবে কোরবানির পশু। তবে চাহিদা অনুযায়ী এর সংখ্যা আরো বাড়তে বা কমতে পারে। এছাড়া, এসব হাটের পাশাপাশি ডিজিটাল পশুর হাটও চালু রাখা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই হাট ইজারা দিচ্ছে দুই সিটি। কিন্তু কোনোবারই প্রত্যাশানুযায়ী দর পায়নি প্রতিষ্ঠান দুটি। কারণ প্রতি বছরই সিন্ডিকেট করে হাট ইজারা নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। এক্ষেত্রে সাধারণ ইজারাদাদরা এবারো হাট ইজারা থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে দুই সিটির ভাষ্য সিন্ডিকেটের কাছে তারা অনেকটা অসহায়। কারণ এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই হাট ইজারা দিতে হচ্ছে।
জানা যায়, এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১১টি অস্থায়ী হাট বসাতে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দক্ষিণ সিটি। এরমধ্যে রয়েছে, উত্তর শাহজানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তাগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা।
অন্যদিকে, উত্তর সিটিতে এবার বসছে ৯টি হাট। ইতিমধ্যে হাটগুলোর ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে রয়েছে- ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গা (ভাটারা সুতিভোলা), কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগর ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, এল, এম, এন এবং আশপাশের জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ওয়ার্ড নম্বর ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা, মোহাম্মাদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউউট সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া বেপারীপাড়া রাহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের জায়গা এবং খিলক্ষেত থানার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পাড়ার খালি জায়গা। এরমধ্যে মধ্যে দক্ষিণ সিটির উত্তর শাহজানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গার হাটের মূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ ২৩ হাজার ৮৬৭ টাকা এবং সিডিউল মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৮০০ টাকা। পাশাপাশি হাটের পরিচ্ছন্নতা ফি ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ১৯৪ টাকা। ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকার হাটের মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১১ হাজার ৬১১ টাকা। হাটটির সিডিউল মূল্য ৬৭ হাজার এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫৮১ টাকা। পোস্তাগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় হাটের সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৫৬ টাকা, হাটের সিডিউল মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৪০০ টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ১১ লাখ ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকা।
মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশ পাশের খালি জায়গায় হাটের মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৪৩৪ টাকা এবং সিডিউল মূল্য ৪৮ হাজার টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ১১ লাখ ৮০ হাজার ২২২ টাকা। লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গায় হাটের মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা, সিডিউল মূল্য ৭৪ হাজার ২০০ টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫০ টাকা। দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় হাটের দাম ৪ কোটি ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৬ টাকা, সিডিউল মূল্য ৮৪ হাজার ২০০ টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ২০ লাখ ৮৮ হাজার ২২৮ টাকা। ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকার হাটের সরকারি দাম ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা, সিডিউল মূল্য ৭৯ হাজার টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৫ টাকা। আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গায় হাটের মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, সিডিউল মূল্য ৫১ হাজার ৮০০ টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ১২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫০ টাকা। আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গায় হাটের দাম ৪৫ লাখ ৫০ হাজার, সিডিউল মূল্য ৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ২ লাখ ২৫ হাজার ৪৮৫ টাকা। রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় হাটের দাম ৫০ লাখ ২৯ হাজার ৭০০ টাকা, সিডিউল মূল্য ১০ হাজার ৮০০ টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ২ লাখ ৫১ হাজার ৪৮৫ টাকা। শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গায় হাটের দাম ৬৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা, সিডিউল মূল্য ১৩ হাজার ৮০০ টাকা এবং পরিচ্ছন্নতা ফি ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫০ টাকা। অন্যদিকে, উত্তর সিটির আওতাধীন এলাকার ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গার (ভাটারা সুতিভোলা) হাটের সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ পাশাপাশি অফেরতযোগ্য সিডিউল মূল্য ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৬০০ টাকা।
কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫০০ টাকা আর সিডিউল মূল্য ২৮ হাজার ১০০ টাকা। উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর বউ বাজার এলাকার খালি জায়গার হাটের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা এবং সিডিউল মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার ৬০০ টাকা। বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগর ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, এল, এম, এন এবং আশেপাশের জায়গার হাটের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ২ হাজার ৭২৭ টাকা আর সিডিউল মূল্য ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। মিরপুর সেকশন ৬ ওয়ার্ড নম্বর ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গার হাটের দাম এক কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৪৬০ টাকা এবং সিডিউল মূল্য ২৮ হাজার ২০০ টাকা। মোহাম্মাদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের সরকারি মূল্য ২ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সিডিউল মূল্য ৪৪ হাজার ৬০০ টাকা। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউউট সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের দাম ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং সিডিউল মূল্য ১২ হাজার ৮০০ টাকা। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া বেপারীপাড়া রাহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের জায়গার হাটের দাম ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সিডিউল মূল্য ৩ হাজার ৯০০ টাকা। খিলক্ষেত থানার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পাড়ার খালি জায়গার হাটের দাম ৩০ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং সিডিউল মূল্য ৬ হাজার ৭০০ টাকা। এ বিষয়ে উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে প্রাথমিকভাবে উত্তর সিটির পক্ষ থেকে ৯টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এরমধ্যে যে কোনো হাট বাতিল বা সংযোজন করা হতে পারে। সব প্রক্রিয়া শেষে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই হাট ইজারা দেয়া হবে।