নভেম্বর ১০, ২০২৪

ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এরপরেও রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার ছাড়তে হচ্ছে। সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাসে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে আশার আলো দেখিয়েছিলো রেমিট্যান্স। ধীরে ধীরে প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের দামও বাড়ানো হচ্ছে। আজ থেকে প্রবাসীরা এক ডলারের বিপরীতে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা, আর আড়াই টাকা প্রণোদনাসহ প্রতি ডরারের বিপরীতে পাবেন ১১১ টাকা ৫০ পয়সা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রবাসী আয় দুই’শ কোটি ডলারও ছুঁতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে প্রবাসীরা ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগের মাসের যার পরিমাণ ছিলো ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাসে অর্থাৎ জুনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে এটি প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ছিল। এর আগে সবশেষ গত ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার এসেছিল। আর বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।

এদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ঢাকা জেলার প্রবাসীরা। আর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে পার্বত্য অঞ্চলের জেলা বান্দরবানে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ঢাকা জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে সর্বোচ্চ ৬৯৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আর বান্দরবানে এসেছে মাত্র ১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার।

এদিকে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তার আগের অর্থবছরে বিক্রি করে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির কারণে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। সবশেষ আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ডের (আইএমএফ) চাপে গ্রস রিজার্ভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরফলে রিজার্ভ ব্যাপকহারে কমে ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর থেকে এ দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।

সবশেষ সোমবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) ডলারের নতুন দাম ঠিক করেছে। এখন থেকে প্রবাসীরা প্রতি ডলারের বিপরীতে ডলারের দাম পাবেন ১০৯ টাকা। আর আড়াই টাকা প্রণোদনাসহ প্রতি ডরারের বিপরীতে পাবেন ১১১ টাকা ৫০ পয়সা। এছাড়া রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ঠিক করা হয়েছে। আমদানি নিষ্পত্তিতেও ডলারের দাম ৫০ পয়সা বৃদ্ধি করে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ২ হাজার ১০২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যার পরিমাণ এর আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...