

মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ তুরস্কে আজ প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রোববার (১৪ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আর এই নির্বাচনেই বড় ধরনের পরীক্ষা মুখে পড়তে চলেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
শক্তিশালী এই নেতা টানা ২০ বছর ধরে দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববারের এই নির্বাচন তুরস্কের প্রবল ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জন্য হতে যাচ্ছে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় লড়াই। কারণ এবার তাকে মোকাবিলা করতে একজোট হয়েছে তুরস্কের বিরোধী সবগুলো দল।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কুলুচদারুলু গত শুক্রবার আঙ্কারায় আয়োজিত এক সমাবেশে ঘোষণা করেন, তিনি দেশে ‘শান্তি ও গণতন্ত্র’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন।
অন্যদিকে ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলছেন, বহু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তুরস্কের মাথা উঁচু রেখেছেন তিনি। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দুই অংকের মুদ্রাস্ফীতিতে পৌঁছে যাওয়া অর্থনীতি এবং গত ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের বিষয়টিও রয়েছে।
তুরস্কের এবারের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে এ দু’টিই মূলত প্রধান ইস্যু হিসেবে রয়েছে।
কেমাল কুলুচদারুলুর বয়স এখন ৭৪ বছর এবং তাকে একজন মৃদুভাষী লোক হিসেবেই মনে করা হয়। জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, সামান্য ব্যবধানে হলেও তাতে এগিয়ে আছেন কুলুচদারুলুই। এমনকি তার সমর্থকরা স্বপ্ন দেখছেন, তিনি হয়তো ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সরাসরি নির্বাচিত হবেন। আর তা হলে দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটির দরকার হবে না।
গত ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবার দেশটির ছয়টি রাজনৈতিক দল জোট বেঁধেছে। আর এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন কেমাল কুলুচদারুলু। তুরস্কের ইতিহাসে এর আগে কখনো এতগুলো দলকে ‘এক হতে’ দেখা যায়নি।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে টিভি সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, নির্বাচনে তিান হেরে গেলে কী করবেন। জবাবে এরদোয়ান বলেন, এটা অর্থহীন প্রশ্ন, কিন্তু তার সরকার গণতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতায় এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ যদি মত পরিবর্তন করে, তাহলে আমরা ঠিক তাই করবো যা গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন।’
তুরস্কে এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন ৫০ লাখ নতুন ভোটার। তাদের একজন হলেন ফিরাত। তিনি বলছেন, এটা দেখে তিনি খুবই খুশি যে মধ্যবাম রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রধানের সাথে একই মঞ্চে এবার রক্ষণশীল এবং জাতীয়তাবাদীদের দেখা যাচ্ছে।
এখানে জাতীয়তাবাদী এবং ছয়দলীয় জোটের একমাত্র নারী নেত্রী মেরাল আকসেনার পাশাপাশি আরও ছিলেন ইসলামপন্থি ফেলিসিটি পার্টির নেতা তেমেল কারামোল্লাওলু। কুলুচদারুলুর দল মূলত ধর্মনিরপেক্ষ, কিন্তু তিনি হিজাব পরেন এমন নারীদের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দিতে অনেক পরিশ্রম করেছেন।
তুরস্কের নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে এককভাবে ৫০ শতাংশ বা এর বেশি ভোট পেতে হবে। এমনটি না হলে যে দু’জন প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তাদের মধ্যে দুই সপ্তাহ পর রানঅফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে কেমালের সমর্থকরা আশা করছেন, রানঅফ নয়— রোববারের নির্বাচেনে এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাবেন তিনি। তবে আশা ছাড়ছেন না প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও তার সমর্থকরা। তবে সে কাজে বড়সড় পরীক্ষার মুখেই রয়েছেন টানা ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা তুরস্কের প্রভাবশালী এই নেতা।