নভেম্বর ২৬, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে ফারাক্কা চুক্তির আলোচনা থেকে বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সংক্রান্ত চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্তকে ‘পশ্চিমবঙ্গ বিক্রি করার পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। এই চুক্তি বাস্তবায়ন সহজ হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার পর এবার পদ্মার পানি ভাগাভাগি নিয়েও মমতা ঝামেলা বাধাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এমন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। এসব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত নেয়া হয়নি বলে ‘বিরক্ত’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বলা হচ্ছে, মমতার ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ ফারাক্কা চুক্তি- যা নিয়ে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ২০২৬ সালে চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এবং শেখ হাসিনার সফরে উভয় দেশই ফারাক্কা চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা শুরুর জন্য একটি ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ গঠনের ব্যাপারে সম্মত হন দুই দেশের সরকারপ্রধান।

পশ্চিমবঙ্গের অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফারাক্কা বাঁধ; যা দিয়ে গঙ্গার পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয় এবং হুগলি নদীতে পানি সরানো নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গঙ্গার পানি কলকাতা বন্দরের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কলকাতাসহ হুগলি-ভাগীরথী নদীর তীরে শহুরে বসতিগুলোর পানির চাহিদা পূরণ করে। ভারতের এই গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাম হয়েছে পদ্মা। এরপর এটি রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, চাঁদপুর হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। বাংলাদেশের উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাণ-প্রকৃতির জন্য এই নদীর পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একইভাবে ভারতের জলপাইগুড়ি এলাকা দিয়ে লালমনিরহাট হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা তিস্তা নদী রংপুর অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিস্তার পানি ইস্যুতে চুক্তি এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষুব্ধ করেছে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মমতা সরকার আগে থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এনডিটিভিকে নিশ্চিত করেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো এসব বিষয়ে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখবেন এবং তৃণমূলের সংসদ সদস্যরা পার্লামেন্টে বিষয়টি উত্থাপন করবেন। তৃণমূল এই ইস্যুতে সমর্থনের জন্য বিজেপিবিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও করতে পারে।

অবশ্য বাংলাদেশের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সমস্যা নেই এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো। সেক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্তকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হলে ভারতের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। সে বছর ১২ ডিসেম্বর উভয় দেশের নেতারা নয়াদিল্লিতে ৩০ বছরের একটি চুক্তি সাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ফারাক্কা থেকে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন হচ্ছে। পূর্ববর্তী ৪০ বছরের গড় মাত্রা অনুযায়ী ভারত গঙ্গার পানির ভাগ পাচ্ছে। একই সঙ্গে যে কোনও সংকটের সময় বাংলাদেশকে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি সরবরাহের গ্যারান্টিও দেয়া হয় এই চুক্তিতে।

এদিকে ২০১১ সালে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে হয়নি। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, তারা এমন কোনও পদক্ষেপ নেবে না, যার বিরূপ প্রভাব পড়ে।

অথচ ২০১১ সালের পর থেকে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করছে ভারত। এমনকি নিয়ম না মেনে পানি সরাতে গত বছর উজানে আরও দুটি খাল খননের উদ্যোগ নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। খবর সময়টিভি

এবার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধ এবং পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় রাজনীতির নানান বিষয় সামনে রেখে গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রেও মমতা ঝামেলা বাধাতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...