

বয়স তিরিশের আশপাশে। এর মধ্যেই আপনার চুল পাক ধরতে শুরু করেছে। সারাদিন ছুটে চলেছেন। ব্যস্ততা বেড়েছে। চারদিকে সামলাচ্ছেন কাজ, পরিবার, অফিস, রাজনীতি, জনসংযোগ, বন্ধুবান্ধব এবং নিজেকে। দাঁড়ানোর ফুরসত নেই। আয়নার সামনে মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে এক অন্য মানুষকে। এই মানুষটার চুলে পাক ধরেছে। মনে হয় বয়সও একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে নিজেকে চিনতেই অসুবিধা হয়— আয়নার মানুষটা আদতে আপনি নিজেই কিনা। এই তো? হ্যাঁ ঠিক তাই, সেই মানুষটাই আমি।
সম্প্রতি নয়াদিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালের ত্বক বিশেজ্ঞ ডিএম মহাজন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এশীয়দের মধ্যে দেখা যাচ্ছে— ২৫ বছরের পর থেকেই চুলে পাক ধরার তিনটি কারণ রয়েছে। । তিনি বলেছেন—৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে চুল পাকে জিনগত কারণে। বাকিদের ক্ষেত্রে পরিবেশ একটা বড় কারণ। অতিবেগনি রশ্মির বিকীরণ, দূষণের জন্যও চুল পাকে। আবার দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপও চুল পাকার কারণ হতে পারে।
দিল্লির একটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের ত্বকের চিকিৎসা বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শিতজি গোয়েল বলেছেন— আধুনিক জীবনযাত্রায় খাওয়াদাওয়ার মান খারাপ হয়েছে। তার ওপরে জুড়েছে ধূমপান, মদ্যপানের মতো বদভ্যাস, যা আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি করে এবং তা থেকেই চুলের রঙ বদলায়। এ ছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে পুষ্টির ঘাটতি, ঘুমের ঘাটতি, নিয়মহীন বিশ্রাম, থাইরয়েডের সমস্যাসহ কিছু রোগের কারণেও চুল পাকতে পারে। এককথা— জিনগত কারণ না থাকলে জীবনযাত্রার ধরনই চুলের অকালপক্বতার কারণ।
এ বিষয়ে চিকিৎসক গোয়েল বলছেন, চুলের অকালপক্বতা আটকানো সম্ভব।এর সমস্যার সমাধান আছে। তবে পাকা চুলকে আগের অবস্থায় পুরোপুরি ফেরানো সম্ভব নয়। তার জন্য মাথায় রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়— ১. পুষ্টির ঘাটতি, ২. থাইরয়েডের সমস্যা, ৩. মানসিক চাপ।
পুষ্টির ঘাটতি হলে চুল পাকতে পারে? রক্তে আয়রন, কপার, ভিটামিন বি১২-এর অভাবে চুল অকালে পাকতে পারে। কীসের অভাব হচ্ছে, তা জানতে প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। এ-ও জানা দরকার— হরমোনের সমস্যার জন্য চুল পাকছে কিনা। একবার কারণ জানা গেলে সেই মতো চিকিৎসা শুরু করা যাবে বা ঘাটতি মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। একই সঙ্গে বদলাতে হবে খাদ্যাভ্যাসও।
ঘরোয়া যেসব উপায়ের কথা মা-চাচি-দাদিদের সময় থেকে চলে আসছে, তার কয়েকটি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন— আমলকী, কারিপাতা এবং মেহেদির ব্যবহার অনেক সময়েই চুলকে কালো রাখতে সাহায্য করে। তবে এসবই কাজ করবে তখন, যখন সার্বিক জীবনযাত্রা বদলানো সম্ভব হবে।