আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বহুল আলোচিত ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ৬০ দিনের জন্য তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের মালিবাগ শাখার স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি অবগতির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশের অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের পাঠাতে বলা হয়েছে।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তার মেয়াদ বাড়তে থাকে। গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির মুখে সবশেষ গত ১৪ আগস্ট ওয়াসার পদ ছাড়েন তিনি। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিমকে একই পদে দীর্ঘসময় রাখা নিয়েও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। ওয়াসা আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং তার অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে।
তাকসিম এ খানের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারার মতো কারণে সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে।
ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের মাসিক বেতন ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে ২ লাখ টাকা। ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান ও মামলার সুপারিশ রয়েছে। তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। তিনি যেকোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলেও শঙ্কা রয়েছে।