ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ও পশ্চিমাদের মধ্যে বরাবরই বিরাজ করছে উত্তাপ। চীন এই ভূখণ্ডটিকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে কার্যত আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করছে, অন্যদিকে বেইজিংয়ের আগ্রাসন থেকে তাইওয়ানকে রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন বা চীনা নীতি অনুসরণে আপত্তি জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমনকি এই বিষয়ে ইউরোপের বেইজিং বা ওয়াশিংটনের নীতি মেনে নেওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রোববার (৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রোববার প্রকাশিত মন্তব্যে বলেছেন, তাইওয়ানের বিরাজমান সংকট ত্বরান্বিত করার কোনও আগ্রহ ইউরোপের নেই। একইসঙ্গে এই ইস্যুতে ওয়াশিংটন এবং বেইজিং উভয়ের থেকে ইউরোপের স্বাধীন একটি কৌশল অনুসরণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সবেমাত্র চীনে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর থেকে ফিরেছেন এবং চীনে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েনের বৈঠকে ক্ষুব্ধ হয়ে চীন গত শনিবার থেকে তাইওয়ানের চারপাশে মহড়া শুরু করেছে।

চীন গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে তার নিজস্ব এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে এবং দ্বীপটিকে তার নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাকে কখনোই ত্যাগ করেনি। তবে তাইওয়ানের সরকার চীনের এই দাবির বিরুদ্ধে বরারবই তীব্র আপত্তি জানিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে চীন সফরের সময় ফরাসি সংবাদপত্র লেস ইকোস এবং পলিটিকোতে কথা বলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রোববার তার এই বক্তব্য প্রকাশিত হয়। সেখানে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চলমান সংঘাতকে ত্বরান্বিত করা উচিত নয় ইউরোপের এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় একটি পক্ষ হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরিতে ইউরোপের সময় নেওয়া উচিত।

পলিটিকো ফরাসি প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘সবচেয়ে খারাপ জিনিস এটি মনে করা হবে যে, ইউরোপীয়দের অবশ্যই তাইওয়ান বিষয়ে (মার্কিন বা চীনা নীতির) অনুসারী হতে হবে এবং আমেরিকান ছন্দ বা চীনা অত্যধিক প্রতিক্রিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’

দু’টি মিডিয়া আউটলেটই ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ইউরোপকে অবশ্যই তার প্রতিরক্ষা শিল্পকে আরও ভালোভাবে অর্থায়ন করতে হবে, পারমাণবিক ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির বিকাশ করতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা সীমিত করতে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।

রয়টার্স বলছে, গত শুক্রবার বেইজিং থেকে আরেক চীনা শহর গুয়াংজু যাওয়ার সময় ফ্লাইটে এই যৌথ সাক্ষাৎকারটি দেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

এর আগে গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর একজন উপদেষ্টা গুয়াংজুতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিজেদের মধ্যে বৈঠকের সময় শি জিনপিং এবং ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তাইওয়ান ইস্যুতে ‘গভীর এবং খোলামেলা’ আলোচনা করেছেন।

ওই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর অনুভূতি হলো- আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত যাতে কোনও দুর্ঘটনা বা উত্তেজনা বাড়তে না পারে। কারণ তেমনটি হলে চীনারা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।’

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

২০২১ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে। তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...