২০২৪–২০২৫ সেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত থাকছে না রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ। আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ সেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হবে।
বৈঠকে শেষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
তিনি বলেন, সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই মুহূর্ত থেকে নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের কোনো ভর্তি নেয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছেন তাদের বিষয়ে ঢাবি দায়িত্বশীল থাকবে।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বিকেল চারটার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মোহম্মদ সজীব উদ্দিন জানান, রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের অন্তত ৪৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সুমাইয়া আক্তার বলেন, দ্রুত হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি তাদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না করা হলে তারা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা দাবিগুলো হলো:
ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং প্রো-ভিসি মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি, ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঢাবি শিক্ষার্থী কর্তৃক ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সাত কলেজের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে তা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসি সদস্য এবং ঢাবি ভিসির সমন্বয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সাথে তাৎক্ষণিক উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এরিয়ায় সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, এদিন বিকেলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ঢাবি প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন।
পরে রাত ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের বাসভবন অভিমুখে যাত্রা করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মিছিল প্রতিরোধ করতে জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নীলক্ষেত মোড়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। এরপর শুরু হয় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টা-পাল্টা ধাওয়া।
রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান তিনি।
রাত ৩টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় নীলক্ষেত মোড়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। পরে এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় এক পথচারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।