দেশের সুষম, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকর বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। এ অবস্থায় ঢাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা’ বা ড্যাপ বাতিলের উদ্দেশ্যমূলক দাবি বাস্তবায়ন হলে তা আত্মদঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
সংগঠনটি বলছে ড্যাপ বাতিলের জন্য একটি গোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ বসবাস উপযোগিতা বিবেচনায় ঢাকার অবস্থান তলানিতে। এ অবস্থায় স্বার্থান্বেষী মহলের কথায় ড্যাপ বা বাতিল বা স্থগিত করা হলে তা হবে আত্মঘাতী।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরের প্ল্যানার্স টাওয়ারে অবস্থিত বিআইপি মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন উন্নয়ন এবং টেকসই পরিকল্পনা চর্চায় স্বার্থান্বেষী মহলের আগ্রাসন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর বাসযোগ্যতা রক্ষায় ড্যাপের প্রয়োজনীয়তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পরিকল্পনাবিদরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিআইপির সভাপতি নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান।
এ সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে, পরিকল্পনাবিদ ও বিআইপির সহ-সভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বলেন, রাজধানীর পরিকল্পনায় বাড়ির মালিক, ভাড়াটে, পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদসহ সব অংশীজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নগরের পরিকল্পনার মূল দায়িত্ব দিতে হবে নগরপরিকল্পনাবিদদের। ড্যাপ বাতিলের ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে, এর পেছনে কারা তা খুঁজে বের করে তাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান তিনি।
পরিকল্পনাবিদ সালমা এ শফি বলেন, দেশের সেরা পরিকল্পনাবিদরাই ড্যাপের পরিকল্পনা করেছিলেন। সেটাকে এক কথায় বাতিল করে দেয়ার চিন্তাটাই অবাস্তব, কারণ এই পরিকল্পনা করতে দীর্ঘ সময় ও শ্রম ব্যয় হয়েছে। একটি নগরের পরিকল্পনা করতে অনেক দিক এবং অনেক কিছু ভেবেই পরিকল্পনা করতে হয়, চাইলেই তা বাতিল করা যায় না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ও নগর পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ ইকবাল বলেন, বৈষম্য শুধু মানুষের সঙ্গেই হয় না প্রকৃতির সঙ্গেও হয়, নগরের সঙ্গেও হয়। দেশের আবাসন খাতের কোম্পানিগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিম্নবিত্তদের কথা মাথায় রেখে প্রকল্প গ্রহণ করেন না। ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে শুধু একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ নয়, বরং সবার স্বার্থ রেখেই যে কোনো ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বিআইপির কোষাধ্যক্ষ ও পরিকল্পনাবিদ মোসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, প্রতি বছরই বাজেট হওয়ার সময় একটি মহল দেশের আবাসন খাতে কালো টাকার বিনিয়োগের সুযোগ রাখার দাবি জানায়। এতে লাভবান হচ্ছে হারুন, বেনজীরের মতো দুর্নীতিবাজরা। তাদের একেকজনের বিশটি, ত্রিশটি করে ফ্ল্যাট, অপরদিকে নগরীর অধিকাংশ মানুষের নিজের একটি ফ্ল্যাটও নেই।
তিনি রাজধানীর পূর্বাচল, ঝিলমিলসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোকে প্লটভিত্তিক বরাদ্দ না দিয়ে সেখানে ব্লক ভিত্তিক বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান, এতে সমাজের যে সব মানুষের সামর্থ্য নেই তাদেরও আবাসন নিশ্চিত হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, প্রকৌশলী আবু সাদিক,নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ, ফজলে রেজা সুমন প্রমুখ।