সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

“সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ হতে হবে”জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বাণীকে প্রতিপাদ্য হিসেবে ধারণ করে ডিএমপি পরিবারের মেধাবী সন্তানদের অনুপ্রেরণা জোগাতে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োাজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি ২০২২ এর আওতায় ৩১৭ জন ও ডিএমপি শিক্ষাবৃত্তি ২০২৩ এর আওতায় ৮১৪ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমার বাবাও একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তোমাদের বাবারাও পুলিশ অফিসার। বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন প্রথম বুলেট কিন্তু ছুড়েছিলেন এই পুলিশ অফিসাররা এই রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকেই। রাজারবাগে আসলে মনে হয় তীর্থভূমিতে এসেছি। এটা এমন একটি জায়গা যেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ তথা সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশটা পেয়েছি। তোমাদেরকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়তে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হলো পরীক্ষা নির্ভর। সবাই পরীক্ষায় ভালো ফল করার চিন্তায় থাকে। অথচ পরীক্ষা ভালো হওয়ার সাথে প্রকৃত ভালোর কোন সম্পর্ক নাই। সিস্টেমের পরিবর্তন আসছে, আশা করি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, সামনে যে দিন আসতেছে তা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। মানুষের কাজ যন্ত্র বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে করে ফেলা হবে। সুতরাং তোমাদের এমন জায়গায় যেতে হবে, নিজেদের এমন অবস্থান তৈরি করতে হবে যাতে কোন কিছু দিয়েই তোমাদের রিপ্লেসমেন্ট করতে না পারে। তোমাদের এমন দক্ষতা অর্জন করতে হবে যেন কোনো সফটওয়্যার তোমাকে রিপ্লেসমেন্ট করতে না পারে। যন্ত্র ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে চিন্তা করার ক্ষমতা বা ইমাজিনেশন। যন্ত্রের চিন্তা করার ক্ষমতা নেই কিন্তু তোমার আছে। রোবট দুনিয়ার সব কিছু জানে কিন্তু চিন্তা করতে পারে না। তোমাদের সেই চিন্তা কারার ক্ষমতাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তোমাদের এই চিন্তাশক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে বই পড়া। যেকোন একটা বই পড়া মানে হচ্ছে সেই বইয়ের লেখকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা। তার চিন্তার সাথে পরিচিত হওয়া। নতুন চিন্তা করার শক্তি অর্জন করা।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আজ যে জায়গাটিতে বসে আছি এই জায়গাটি একটি পবিত্র জায়গা, পবিত্র ভূমি। এই ঐতিহাসিক রাজারবাগ থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে গভীর রাতে যারা প্রথম সাড়া দিয়েছিল তারা এই রাজারবাগের পুলিশ সদস্য।

তিনি বলেন, তোমরা যারা এখানে রয়েছো, তোমাদের পিতা যারা পুলিশে কাজ করছেন তাদের পূর্বসূরীরা অকুতোভয় সৈনিক, যারা দেশ মাতৃকার জন্য পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন সামান্য থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা যুদ্ধ করেছিলেন এবং বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের বাঙালিদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিলেন, সেই সব বীর সদস্যদের উত্তরসূরী আমরা। আর তোমরা সেই উত্তরসূরি গর্বিত পিতাদের গর্বিত সন্তান। এখানে ১ হাজার ১৩১ জন কৃতি শিক্ষার্থী রয়েছে, এখানে হাজার তারার মেলা বসেছে। তোমাদের যে অর্থ দেওয়া হয়েছে এটা বড় কথা নয়, তোমাদের যে কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে এটাই সম্মানের বিষয়।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, জনগণের জানমাল, সরকারী সম্পদ হেফাজত করা। অন্য যেকোন সংস্থার কর্মঘণ্টা আছে কিন্তু পুলিশের কোন কর্মঘণ্টা নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়। পরিবারকে সময় দেওয়া এবং পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার সময়টুকুও হাতে থাকে না। তারপরও তোমরা কিন্তু থেমে নেই, তোমাদের এই কৃতিত্বই তারই প্রমাণ। আমার নিজের এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে, আইজিপি স্যারের পক্ষ থেকে আমি তোমাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, জীবনে চলার পথে আমরা কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনী অনুসরণ করে চলি। আমিও তোমাদেরকে একজন ব্যক্তির জীবন অনুসরণ করতে বলবো, তিনি আর কেউ নন, আমাদের সবার শ্রদ্ধাভাজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা যদি তাঁর জীবন, কর্ম, চিন্তাসহ সবকিছু পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখব তিনি একজন আদর্শ মানুষের প্রতিকৃতি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা যখন শিক্ষা গ্রহণ করি তখন শিক্ষার উদ্দেশ্য কী তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য থাকে বড় হয়ে একটি ভালো চাকরি করবে। তারা চাকরি কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকে থাকে। কিন্তু শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনুষ্যত্ববোধ অর্জন করা, সংরক্ষণ করা ও জীবনে তা প্রতিফলিত করা, সেই বিষয়টি সব সময় তোমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। শুধু চাকরির সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা থাকা উচিত নয়।

ডিএমপির কমিশনার আরও বলেন, মোবাইল ফোন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। মোবাইল ফোন মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি মোবাইল ফোনের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাই, মোবাইল ফোন হাতের মুঠোয় একটি বিশ্বকোষ বা জ্ঞানভাণ্ডার। এটিকে যদি ইতিবাচকভাবে তোমরা ব্যবহার করতে পার তাহলে তা থেকে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবে। মোবাইল ফোনকে নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার না করে ইতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ডিএমপির এই শিক্ষাবৃত্তি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য এই শিক্ষাবৃত্তি বৃত্তিপ্রাপ্তদের উদ্বুদ্ধ করবে। বৃত্তিপ্রাপ্তরা দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠলে সেটাই হবে আমাদের সফলতা।

বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা জানান, এই রকম সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের অংশীদার হতে পেরে তারা নিজের সৌভাগ্যবান মনে করছেন। ডিএমপিকে এ রকম সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানান তারা। তারা বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান তাদের জন্য খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। পরবর্তী জীবনের সফলতার জন্য এই উদ্যোগ তাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।

কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহাঃ আশরাফুজ্জামান বিপিএম; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার); ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *