নভেম্বর ১৪, ২০২৪

মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে অবশ্য পালনীয় রোজা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাও জরুরি। কারণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ম মেনে ও সময় মতো খাবার খেতে হয়। সেই সঙ্গে দিনের বিভিন্ন সময় তাদের ওষুধ নেয়ার দরকার হতে পারে। ফলে সেহরি এবং ইফতারের মধ্যে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার প্রভাব পড়তে পারে তাদের শরীরে। দীর্ঘ সময়ে না খেয়ে থাকার প্রভাবে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকে।

ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখলে কোনো সমস্যা নেই তবে অবশ্যই ইফতারে ও সাহরিতে সব খবার খাবেন না। খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতেন হওয়া জরুরি।

ইফতারে ভাজা-পোড়া ও মিষ্টি খাবার খাওয়া হয়। খেজুর, শরবত ও জিলাপি ছাড়া ইফতার যেন অসম্পূর্ণ। কিন্তু ডায়াবেটিসের রোগীরা এগুলো বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর কিছু ইফতার বেছে নিতে পারেন।

ইফতারে কী খাবেন ?

১. ডায়াবেটিস রোগীরা চিনি বা গুড় মেশানো শরবত ও কোনো খাবার খাবেন না।

২. ইফতারে ভাজা-পোড়া কম খেয়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি বেশি খান।

৩. ডায়াবেটিসের রোগী সেহেরি না খেতে পারলে রোজা থাকবেন না।

৪. ইফতারে শরবত জন্য থেতে পারেন ডাবের পানি, ফলের রস, লেবু-লবণের শরবত খেলে শরীরের পানি ও লবণশূন্যতা দূর হবে। এছাড়া টক দইয়ের লাচ্ছি, ইসবগুল বা তকমা মেশানো পানীয় খেতে পারেন।
৫. আদা-পুদিনা দিয়ে কাঁচা ছোলা, সেদ্ধ ছোলা, শসা, টমেটো ও মিষ্টি ফলের সালাদ খান।

৬. ইফতারে একটি খেজুর খাবেন।

৭. ইফতারের পর সন্ধ্যা রাতে ভাত না খেয়ে বরং রুটি, ফলমূল, ওটস, দুধ, দই-চিড়া খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।

ডায়াবেটিক রোগীরা সেহরিতে যেসব খাবার খাবেন-

১. অনেকে মনে করেন, সেহরি পেটপুরে খেলে সারা দিনে ক্ষুধা লাগে না। তাই অনেককে সেহরি বেশি খেতে দেখা যায়। শেষ সময় পর্যন্ত অনেকে পানি পান করতেই থাকেন। এটি বরং অস্বস্তি তৈরি করবে।

২. অন্য সময় দুপুরে বা নৈশভোজে যা খেতেন, সেহরি সেই স্বাভাবিক খাবারটাই খাবেন। পরিমিত পরিমাণে ভাত অথবা রুটি, সঙ্গে মাছ বা মাংস, ডাল, সবজি, সালাদ। শেষে এক কাপ দুধ বা দই।

৩. ডায়াবেটিক রোগীরা সেহরি আতপ চালের ভাত খাবেন না। লাল চালের ভাত খাওয়া ভালো। কারণ, সেদ্ধ মোটা চাল ও লাল চালের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স অনেক কম। এতে ফাইবার বেশি, তাই ধীরে শোষিত হয়। তাই সারা দিন ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করবে। ভাতের বদলে লাল আটার রুটিও খেতে পারেন।

৪. অনেক বেশি খাবার খেলে বদহজম, গ্যাসের সমস্যা হওয়া ছাড়াও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

৫. সবজির পাশাপাশি কিছু শাক অবশ্যই খাবেন। শাকের সেলুলুজ আপনাকে সারা দিনে পেট ভরে থাকার মতো অনুভূতি দেবে। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে।

৬. সেহরি শেষ সময়ের ১০-১৫ মিনিট আগে খাওয়া শেষ করতে হবে। অনেকের স্বভাব, মাঝরাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া। ডায়াবেটিক রোগীরা তা কখনো করবেন না।

৭. বিরিয়ানি–পোলাও বা খিচুড়ির মতো খাবার খাবেন না। এগুলো পানির চাহিদা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

৮. প্রোটিন হিসেবে মাংসের বদলে মাছ খান অথবা ঘন ডাল রাখুন।

৯. অনেকে ওজন কমাতে কিছু না খেয়েই রোজা রাখেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

১০. চাইলে একটা খোসাসহ ফল খেতে পারেন।

১১. সন্ধ্যা থেকে সেহরি পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করবেন। সেহরি চা–কফি পান করলে ডিহাইড্রেশন বাড়বে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রোজা রাখার ক্ষেত্রে কী করণীয়?

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের রোজার আগেই আরেকবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিনা।

স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী তাদের রোজা পালন করা উচিত হবে কিনা বা কিভাবে করতে পারবেন, তা নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

চিকিৎসক ওষুধের ডোজ পরিবর্তন বা সমন্বয় করে দিতে পারেন। সেটা অনুসরণ করে তারা সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...