সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরও শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের বৈঠকে নেওয়া এ সিদ্ধান্তের ফলে ডব্লিউটিওর সদস্যরা বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাণিজ্যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা দিতে পারবে। ডব্লিউটিও সোমবার এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনও আলাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে জাতিসংঘের এলডিসি তালিকা থেকে বের হলে কোনো দেশ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতো না। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণের জন্য এলডিসি দেশগুলোকে বাড়তি সময় সুবিধা দেওয়া যাবে। তবে কোন দেশ কত বছর সুবিধা দেবে, তা নির্ভর করবে ওই দেশের সিদ্ধান্তের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে বাড়তি সুবিধা এলডিসি থেকে বাংলাদেশের টেকসই উত্তরণে সহায়তা করবে।

ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়ালা বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ উন্নয়ন অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ করতেই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে। ডব্লিউটিওতে এলডিসি গ্রুপের সমন্বয়কারী জিবুতির রাষ্ট্রদূত কাদরা আহমেদ হাসান বলেন, সিদ্ধান্তটি এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থায় আরও একত্রীকরণের পথে দেশগুলোকে বৃহত্তর পূর্বাভাস ও আস্থা দেয়।

ডব্লিউটিওর সাধারণ পরিষদের সভায় বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। তপন কান্তি সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। তবে কত বছর পর্যন্ত পাওয়া যাবে– সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ডব্লিউটিওর ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক পর্যন্ত এ বিষয়ে আলোচনা চলবে।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তফা আবিদ খান সমকালকে বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে আশা করা যায়, যে কোনো দেশ অন্তত তিন বছর বাড়তি শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেবে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগেই জানিয়েছে, তারা তিন বছর বাড়তি সুবিধা দেবে। কানাডাও একই সুবিধা দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত। এখন আশা করা যায়, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়েসহ অন্যান্য দেশও একই সময় এ ধরনের সুবিধা দেবে। তিনি আরও বলেন, শুধু এ সুবিধা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। স্থিতিশীল উত্তরণের জন্য বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বেসরকারি খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করারও উদ্যোগ নিতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ডব্লিউটিও থেকে এলডিসি উত্তরণের পরও সুবিধাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে সুবিধা চাওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা। অন্যটি মেধাস্বত্ব ও ভর্তুকি সম্পর্কিত। বাড়তি সময় শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সোমবার সাধারণ পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এলডিসির জন্য মেধাস্বত্ব, ভর্তুকিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রভিত্তিক বিশেষ সুবিধা চিহ্নিত করার আলোচনা চলমান রয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউটিওর ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ এলডিসি গ্রুপের সদস্যরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের

হবে।

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *