সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন উৎসাহিত করে আসছে। ফলে দেশের ব্যাংক খাত এখন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এর ফলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) টেকসই প্রকল্পে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়েছে ২২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ‘টেকসই খাতে অর্থায়ন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে টেকসই খাতে ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৭ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা, যা ছিল ব্যাংকগুলোর দেওয়া মোট মেয়াদি ঋণের ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে এই খাতে ব্যাংক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ আলোচ্য এই সময়ে টেকসই প্রকল্পে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব খাতে বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে দিতে বলেছে। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্প ইত্যাদি। টেকসই অর্থায়নের মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব খাতে যেকোনো ধরনের অর্থায়ন।

অন্যদিকে গত ডিসেম্বর শেষে টেকসই খাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ২৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। জুন শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সারা বিশ্বে এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। সে জন্য কার্বন নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঝুঁকছে বিভিন্ন দেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এদেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২১৯টি। এই অবস্থায় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই অর্থায়নের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে অনেক ব্যাংক তাদের শাখা ও এটিএমে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক তো কাগজের ব্যবহারও কমিয়ে আনছে। টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে বা হবে এমন প্রকল্পগুলোকে প্রধান দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক টেকসই অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) উৎসাহিত করে আসছে। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাসটেইনেবল রেটিং বা টেকসই মান প্রকাশ করছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মান যাচাই করা হয়। সূচকগুলো হলো টেকসই অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচক এবং ব্যাংকিং সেবার পরিধি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেকসই অর্থায়ন নিয়েছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১২৭ জনই হলেন পুরুষ উদ্যোক্তা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে টেকসই অর্থায়নের নারী গ্রাহক সংখ্যা ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬১৫ জন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *