প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার টাকা ন্যূনতম করের বিধান প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে। সরকারের ৪৪টি সেবা নিতে সাধারণ মানুষকে এই কর পরিশোধ করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই দিনই বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সাধারণ মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।
গত ১ জুন বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ন্যূনতম করের বিধান সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘ন্যূনতম কর দিয়ে উন্নয়নে অংশীদার হওয়া গর্বের বিষয়।’ তার এই বক্তব্যে দেশের অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী ২৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। তার আগে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু বিষয় প্রত্যাহার করা হবে। একই সঙ্গে নতুন কিছু প্রস্তাব সংযোজিত হবে। আগামী ৩০ জুন চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কার্যকর হবে।
সরকারের কাছ থেকে ৪৪ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমনকি করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার বিধান রাখা হয় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। কিন্তু নানা মহলের সমালোচনার প্রেক্ষিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুসারে, মোট ৪৪টি সরকারি পরিষেবা পেতে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সেবাগুলো হচ্ছে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে, কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট পেতে, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি বা ফ্ল্যাটের দলিল করার ক্ষেত্রে, ক্রেডিট কার্ডেও জন্য আবেদনের সময়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করতে গেলে এবং সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে ইত্যাদি।
জাতীয় সংসদে গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। যাদের করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে- তাদের ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর জমা দিতে হবে।
বাজেট প্রস্তাবে এমন বিধান রাখায় পরবর্তীতে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি আপাতত যৌক্তিক হবে না। করমুক্ত আয়সীমা থাকায় এই ন্যূনতম করের ধারণাটি করনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেও মন্তব্য করেন তারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটসহ (পিআরআই) বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংস্থা এ ধরনের কর প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়।
এমন প্রেক্ষাপট ও মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারের সর্বোচ্চ স্থান থেকে এই ধরনের করের বিধান ‘বাদ দিতে’ বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।