জুন ২৯, ২০২৪

টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্রুত বাড়ছে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি। সেই সঙ্গে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ২ লাখেরও বেশি মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহখানেক ধরে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি কখনও কমছে আবার কখনও বাড়ছে। এতে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা নিয়ে সময় পার করছেন সুনামগঞ্জের ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। তবে সেই দুশ্চিন্তা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে গতকালের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল।

সেই সঙ্গে গতকাল সকাল থেকে সুনামগঞ্জে মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নামছে ভারতের পাহাড়ি ঢলে। ফলে দ্রুত গতিতে বাড়ছে জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, বৌলাই, রক্তি ও যাদুকাটা নদীর পানি। এতে বন্যার শঙ্কায় আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন ভাটির জেলার বাসিন্দারা।

এদিকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারা বাজারসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজারের শরীফপুর গ্রামের প্রধান সড়ক ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দোয়ারাবাজার উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সুরমা, লক্ষ্মীপুর, বাংলাবাজারসহ তিন ইউনিয়নের। এছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলার দূর্গাপুর সড়ক ডুবে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। এতে ছোট নৌকা করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যস্থানে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে পানির কারণে রাস্তার পাশে আটকে পড়েছে ছোট-বড় প্রায় ৫০টি যানবাহন। এমনকি ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন রাহাত বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির জন্য বারবার আমরা বিপদে পড়ি। প্রায়ই এদিকে পানি আসে। সড়ক ডুবে গেলে আর কোনো সড়ক না থাকায় এভাবে পানিতে হাবুডুবু খেয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। নৌকা নিলেও ভাড়া বেশি দেওয়া লাগে।

তাহিরপুর এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমেদ নদীতে পানি বাড়তে থাকায় আমরা বেশি ঝুঁকিতে আছি। ২০২২ সালে আমরা বন্যা দেখেছি এমন বন্যা হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। ধীর গতিতে পানি বাড়লেও ভয় তো আর কমছে না।

দুর্গাপুর গ্রামের শিক্ষার্থী ইসমাইল আলী বলেন, অনেক কষ্ট করে স্কুলে এসেছি। জরুরি ক্লাস পরীক্ষার কারণে আসতে হয়েছে। নদী পথে স্কুলে যেতে হয় তাই বাসা থেকে স্কুলে যেতেও দিচ্ছেন না অনেক অবিভাবক।

তাহিরপুরের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এখন গন্তব্য স্থানে যেতে আমাদের বাড়তি ভাড়া যেমন গুণতে হচ্ছে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে সুনামগঞ্জের সকল নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে এই জেলায় স্বল্পমেয়াদি একটা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *