জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) ফিলিস্তিনে মানবিক সংকটের প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে জলবায়ু সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
জলবায়ু বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে উদাত্ম আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘পৃথিবী আমাদের নয়, আমরাই পৃথিবীর। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ এরই মধ্যে বিপদের মুখে থাকা বিভিন্ন দ্বীপ দেশসহ ভারত, বাংলাদেশের নানা অংশে তাণ্ডব ঘটিয়েছে; পাকিস্তান নজিরবিহীন বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। আট বছর আগে ফ্রান্সের প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনে ভাষণ দিতে পেরে আমি উদ্বেলিত হয়েছিলাম। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হয়েছিল। সেটি ছিল আশা, ইতিবাচকতার এক মাইলফলক মুহূর্ত। বিভিন্ন দেশ মতবিরোধ সরিয়ে রেখে ভালো কিছু করার জন্য একত্রিত হয়েছিল।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিটি দেশকে তাদের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ সারা বিশ্ব আমাদের দেখছে। পৃথিবী তার ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের সফল হতে হবে।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বাস্তববাদী হওয়া উচিত
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, আমরা প্রত্যেককে সাহায্য করার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বাস্তববাদী হওয়া উচিত। শুধু বিশ্বনেতা হলেই হবে না, এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা ঘরের মানুষদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি কি না।
কয়লার অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো বলেন, গ্রুপ অব সেভেনকে (জি৭) জলবায়ু সুরক্ষায় অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। কয়লাকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আরও বিলম্ব বিপজ্জনক হবে
জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু কর্মকর্তা সাইমন ইমানুয়েল কারভিন স্টিয়েল বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড ভেঙেছে, যা এই বছরটিকে রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ করে তুলেছে, এবং বিপজ্জনকভাবে ১.৫ সেলসিয়াসের থ্রেশহোল্ডের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অথচ দেশগুলো প্যারিস চুক্তিতে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প স্তরের ওপরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে সম্মত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সীমার মধ্যে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা এখনও সম্ভব, তবে আরও বিলম্ব বিপজ্জনক হবে। অথচ প্রতি বছর আমরা শিশির বিন্দুর মতো পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের আরও বড় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যদি আমরা এই দৌঁড়ে থাকতে চাই তাহলে প্রতিটি বছরের সঙ্গে আমাদের আরও বড় লাফ দিতে হবে। আমাদের কি করতে হবে বিজ্ঞান তা একেবারে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে।
পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনের স্থান চূড়ান্ত নিয়ে জটিলতা
জাতিসংঘের পরবর্তী জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ-২৯) আয়োজক দেশ নিয়ে জটিলতার তৈরি হয়েছে। কপ-২৯ আয়োজনে পূর্ব ইউরোপের কোনো দেশের কথা চিন্তা করা হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলটিকে আয়োজক হিসেবে নির্ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর্মেনিয়া, আজারবাইজান আয়োজক হওয়ার প্রস্তাব দিলেও সে ব্যাপারে অধিকাংশ দেশই সম্মত নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরেক সদস্য দেশ বুলগেরিয়া আয়োজক হতে আগ্রহী হলেও রাশিয়া তাতে বিরোধীতা করেছে। এজন্যই তৈরি হয়েছে জটিলতা।
সার্বিকভাবে আয়োজক দেশ নিশ্চিত হওয়া না গেলে পুনরায় জাতিসংঘের জলবায়ু সচিবালয়ের সদর দপ্তর জার্মানির বন শহরে সম্মেলনটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৫ সালে কপ-৩০ আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। তার পরের বছর ২০২৬ সালে কপ-৩১ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। ২০২৮ সালে কপ-৩৩ আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। এছাড়াও ভবিষ্যতে সম্মেলন আয়োজনে আরো অনেক প্রস্তাব দিয়েছে বিভিন্ন দেশ।
৩০ নভেম্বর স্থানীয় সময় সকালে দুবাইয়ের এক্সপ্রো সিটিতে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর সহযোগিতার জন্য তহবিলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবারের সম্মেলনে।
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ সম্মেলনে ইতোমধ্যে তহবিল অনুমোদন করেছে তেলের অন্যতম বড় উৎপাদক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উন্নত আরো কয়েকটি দেশের তরফ থেকেও এমন সহায়তার আশ্বাস এসেছে।
এবারের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ক্ষয় ও ক্ষতিকে (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু কর্মকর্তা সাইমন ইমানুয়েল কারভিন স্টিয়েল।
তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে তহবিলে অর্থায়নসহ আমাদের সামনের দিকে এগুতেই হবে। এখান থেকে পেছন ফেরার সুযোগ নেই। উন্নত দেশগুলো বেশ কয়েক বছর আগে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই অর্থ দেওয়া হবে তাদের অভিযোজন ও সবুজ জ্বালানির উন্নয়নে। আমরা আশা করছি, এ বছর আমরা এই প্রতিশ্রুতির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন বন্যা, খরা, সামুদ্রিক ঝড়, ভূমিধস এবং দাবানলের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এগুলোর শিকার হচ্ছে তারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছে এর মোকাবিলায় তাদের অর্থ দরকার। এটাকেই বলা হচ্ছে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ।’