সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জাহাজে আছে ৮০ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৫৫ হাজার টন কয়লা। এসব কয়লা মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়ার পথে ২৩ নাবিক ও ক্রুসহ জাহাজটিকে আটক করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। গত মঙ্গলবার তাদের জিম্মি করে জলদস্যুরা জাহাজটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমায় নিয়ে গেছে। এমভি আব্দুল্লাহ ও এর জিম্মিদের মুক্তি দিতে কেউ এখনো মুক্তিপণ চেয়ে যোগাযোগ করেনি। তবে মুক্তিপণ ছাড়া মুক্তি মিলবে না বলে নিশ্চিত হয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষ।
এই মুক্তিপণ প্রদান ও গ্রহণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই কয়লা বোঝাই জাহাজটি কত দিন এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম এমভি জাহান মণি। সেটিতে পণ্য ছিল আকরিক। মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।
এদিকে জাহাজে থাকা নাবিকদের সঙ্গে খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে জলদস্যুরা। আজ রোববার দিনভর নাবিকদের সঙ্গে কারো কোনো যোগাযোগ করতে দেয়নি জলদস্যুরা। শনিবার দিনভরও ছিল অভিন্ন চিত্র। দিনভর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার পর রাত আটটার দিকে একজন নাবিকের সঙ্গে মালিকপক্ষকে কথা বলতে দিয়েছে জলদস্যুরা।
জানতে চাইলে কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র ও গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজে জিম্মি থাকা নাবিক ও ক্রুদের সঙ্গে খুব সীমিত পরিসরে কথা হয় আমাদের। সেখানে বিস্তারিত কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ থাকছে না। আজ সারাদিন নাবিকদের কারো সঙ্গে আমরা কথা বলার সুযোগ পাইনি। গতকাল শনিবার দিনভর ছিল এমন যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। রাত আটটার দিকে একজন নাবিকের সঙ্গে অল্প সময় কথা বলার সুযোগ পাই আমরা।’
জাহাজে থাকা কয়লার দাম কত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা জানা নেই। তবে পণ্যের পরিমাণ প্রায় ৫৫ হাজার টন।’ জানা গেছে, জাহাজে থাকা এসব কয়লার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা বা ৬৬ লাখ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ডলার কয়লার দাম ১১০ থেকে ১২০ ডলারে ওঠানামা করছে। নিউক্যাসেল কোল ইনডেক্স অনুযায়ী প্রতি টন কয়লার দাম ১৩০ থেকে ১৪০ ডলার। আবার ইন্দোনেশিয়া কোল ইনডেক্স অনুযায়ী প্রতি টন কয়লার দাম ১১৫ থেকে ১২০ ডলার।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন জানান, সাগরে চলাচল করা কার্গো জাহাজে বিভিন্ন ধরনের পণ্য থাকে। কিছু পণ্য নির্ধারিত সময়ে খালাস না করলেও কোনো সমস্যা হয় না। আবার কিছু পণ্য আছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খালাস করে ফেলতে হয়। কোনো কারণে খালাস করতে দেরি হলে তা বিভিন্ন ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জাহাজের ভেতরে দাহ্য পদার্থ থাকলে এই ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে থাকা প্রায় ৫৫ হাজার টন কয়লা দু-তিনদিনের মধ্যে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে খালাস করার কথা ছিল। কিন্তু এখন এসব কয়লা কখন খালাস হবে, জিম্মিরা কবে মুক্তি পাবে- তা জানে না কেউই।
জলদস্যুদের হাতে এর আগে আটক হওয়া আরেক বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি মুক্ত হতে সময় লেগেছিল ১০০ দিন। আবার আট মাস কিংবা দুই বছরের বেশি সময় ধরে আটক থাকা জাহাজও আছে জলদস্যুদে
র কাছে।