স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ইসরাইলপন্থি পদক্ষেপে জর্ডানেই শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। বেশিরভাগ আরব দেশ ইরানের পক্ষ নিলেও জর্ডান ইসরাইলের পক্ষ নেয়। ইসরাইলের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরানের পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জর্ডানের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ধ্বংস করে দেওয়া হয় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। এতে জর্ডানেই শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে জর্ডানে, যেখান থেকে তারা নিয়মিতই ইসরাইলকে সহায়তা করে থাকে এবং সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইরানে আড়িপাতার কাজ করে থাকে।
জর্ডানের এমন বেইমানিতে চুপ করে নেই ইরান। ইরানের সামরিক বাহিনীর এক সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা মেহর জানায়, জর্ডানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে ইরান। যদি তারা ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলায়, তবে জর্ডান হয়ে উঠবে ইরানের পরবর্তী লক্ষ্য।
বিগত বছরগুলোতে ধীরে ধীরে ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বের মতবাদ থেকে সরে এসেছে ফিলিস্তিন। গত বছরের ৫ নভেম্বরেই জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ গাজায় জর্ডানের হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতে সফল হয়েছেন বলে বক্তব্য দেন। এদিকে ইসরাইলের দিকে ছোঁড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে জর্ডানের বিমানবাহিনী।
জর্ডান সরকার এক বিবৃতিতে বলে, আত্মরক্ষার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো (ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র) আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল।
এরপর নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানি হোক আর ইসরাইলি, জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করা যে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন প্রতিহত করা হবে।
এই বিবৃতির নিন্দা জানিয়েছে জর্ডানের সরকারবিরোধীরা। তারা দাবি করে, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান এর আগেও জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে- বিশেষ করে সিরিয়ায় অভিযান চালানোর সময়ে। তখন জর্ডান কোনো বাধা দেয়নি।
ইরান থেকে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সময়েও নিজেদের আকাশসীমায় ইসরাইলি যুদ্ধবিমান প্রবেশে বাধা দেয়নি জর্ডান।
ইসরাইলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান জর্ডান এবং সিরিয়ার আকাশসীমানায় প্রবেশ করে। সেখানে ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ধ্বংস করে। এমনকি ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানও এক্ষেত্রে জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে থাকতে পারে।
আরব বিশ্বের সঙ্গে বেইমানি করে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলানো জর্ডানের জন্য নতুন কিছু নয়।
১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ইসরাইলের সঙ্গে জর্ডানের চারটি যুদ্ধ হয়। ১৯৯৪ সালে এক শান্তি চুক্তি হওয়ার পর থেকে এই দুই দেশের মধ্যে আর কোনো সংঘর্ষ হয়নি। এমনকি তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চুক্তিও হয়েছে।
জর্ডানের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ফিলিস্তিনি এবং তাদের বংশধর। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এসব ফিলিস্তিনি ভূমিহীন হয়ে পড়ে এবং জর্ডানে আশ্রয় নেয়। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়ে আসার সুবাদে ১৯৭০ সালে একবার ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের চেষ্টাও করে জর্ডান। সেই সময়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিদের হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান তৎকালীন জর্ডান রাজা হুসেইন বিন তালাল।
কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরাইলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে জর্ডান সরকারের ওপর বিরক্ত কয়েক হাজার নাগরিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরাইল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান। এমন অবস্থায় আরব বিশ্ব জর্ডানকে একঘরে করে ফেলবে- এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
সূত্র: দ্য ক্রেডল, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।