ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিওর) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে যাওয়া কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড জমির যে তথ্য দিয়েছে তাতে অসঙ্গতি রয়েছে। এছাড়াও শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ (এনএভি) বেশি দেখাতে সম্পদমূল্য বেশি দেখানোর তথ্য পেয়েছে ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস ও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করে এই প্রমাণ পেয়েছে এফআরসি। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি বিএসইসিকে পাঠিয়েছে এফআরসি।

এফআরসি বলছে, আইপিওতে শেয়ারের মূল্য বেশি পেতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তরা এনএভি বেশি দেখিয়েছে। নানা ধরনের মিথ্যা তথ্যও দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেওয়া প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছে কমিশন। তারপর কমিশনের একটি টিম কোম্পানি পরিদর্শন করেছে। কমিশনও মনে করছে, জমির কাগজপত্র সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে। এটি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আইপিও কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী, বিডিংয়ের মাধ্যমে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে কয়েকটি পদ্ধতির মধ্যে একটি এনএভি-এর ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ। কোম্পানির প্রসপেক্টাস অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের মূল্য ১১৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সম্পদের মূল্য ৭৩ শতাংশের বেশি দেখানো হয়েছে। কোম্পানির এই কাজে সহযোগিতা করেছে কোম্পানির ভ্যালুয়ার শফিক বাসেক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কোম্পানি। আর অডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে আশরাফ উদ্দিন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সম্পদমূল্য বেশি দেখানোর অভিযোগে কোম্পানিটির আইপিওর সাবক্রিপশন স্থগিত করেছে বিএসইসি। কোম্পানিটির অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন ও জমির মালিকানা নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছিল বিএসইসি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন আইপিও’র পাবলিক সাবক্রিপশন বন্ধ করে এবং অধিকতর তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস এবং নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করতে ফাইন্যান্সসিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে চিঠি দেয়।

সেই প্রেক্ষিতে এফআরসি কোম্পানিটির নন-কারেন্ট অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন, রেভেনিউ ও মুনাফা, জমির মালিকানা, শেয়ার মানি ডিপোজিট এবং নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে সমস্যা খুঁজে পেয়েছে।

বিএসইসির তথ্য মতে, গত বছরের ৩১ আগস্ট বিএসইসি কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৯৫ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলনে শেয়ার প্রাইস নির্ধারণের জন্য বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়।

পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ নতুন প্ল্যান্ট এবং যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণ ও স্থাপন, সম্প্রসারণ ইউনিটের জন্য কারখানা ভবন নির্মাণ, ব্যাংক ঋণের পরিশোধ এবং আইপিও খাতে ব্যয় করবে বলে জানায় কোম্পানি।

প্রসপেক্টাস অনুসারে, কোম্পানিটি মূলত তহবিল ব্যবহার করবে ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন শুরু করতে। তার জন্য যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণ ও ইনস্টলেশনের জন্য ৫৮কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করবে। এছাড়াও কারখানা নির্মাণে ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ২৮ কোটি টাকা ব্যবহার করবে।

অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করার পর গত বছরের ১০-১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিডিংয়ে প্রতিটি শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস ৫০ টাকা নির্ধারিত হয়। কমিশনের শর্তানুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ২০ টাকায় শেয়ার পাবে।

ডিএসইর তথ্য মতে, প্রতিটি শেয়ার ৫০ টাকায় কেনার জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ১৬১টি বিড করেছিলেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বরাদ্দ দিতে সাবক্রিপশনের তারিখও ঘোষণা করা হয়। তবে সাবক্রিপশন শুরুর আগের দিন ১৫ জানুয়ারি বিএসইসি অভিযোগের ভিত্তিতে কোম্পানির আইপিও সাবক্রিপশন স্থগিত করে।

ওইসময় কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিনিয়োগকারীর স্বার্থে সাবক্রিপশন স্থগিত রাখা হয়েছে। আর স্থগিত করার কারণে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের টাকা গত পাঁচমাস ধরে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আটকে রয়েছে।

প্রসপেক্টাস অনুসারে, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত সময়ে শফিক বাসেক অ্যান্ড কোম্পানির ভ্যালুয়েশনে জমির মূল্য ৪৯০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যা এক বছরের ব্যবধানে ১৯৩ কোটি টাকা বেড়েছে। এই ভ্যালুয়েশনে জমির মূল্য ও জমি উন্নয়ন বাবদ দাম বাড়ানো হয় ৩০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত কোম্পানিটির নন-কারেন্ট অ্যাসেট মূল্য আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

নন-কারেন্ট অ্যাসেট হলো- একটি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। নন-কারেন্ট সম্পদ সহজে নগদে রূপান্তর করা যাবে না।

প্রসপেক্টাস অনুসারে, ১৯৯৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। গাজীপুর ও তেজগাঁও এলাকায় কোম্পানিটির জমি রয়েছে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ জৈবিক, অ-জৈবিক, এবং জীবাণুমুক্ত পণ্য যেমন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, ক্রিম, চোখের পণ্য, ইনজেকশন এবং আরও অনেক কিছুর উৎপাদন ও বিপণন করছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ৬ মিলিয়ন ট্যাবলেট, ৫ মিলিয়ন ক্যাপসুল, ২ মিলিয়ন ইনজেকশন, দেড় মিলিয়ন টিউব ক্রিম এবং ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বোতল সিরাপ তৈরি করে।

২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানির বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। যা ৫ বছর আগে ছিল ১১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...