প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমাকে আর গুলি-বোমা মারা লাগবে না, আমি এমনিতেই মারা যাবো। জনগণই আমার প্রাণশক্তি।
বুধবার (২৬ জুন) এসএসএফের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে আয়োজিত দরবারে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রাজনীতি করি। আমার একমাত্র শক্তি জনগণ, আর কোনো শক্তি নেই। সেই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি। কাজেই জনবিচ্ছিন্ন যাতে না হয়ে যাই, আমি জানি এটা কঠিন দায়িত্ব। তারপরেও এই দিকেও নজর রাখতে হবে যে এই মানুষগুলোর জন্যইতো রাজনীতি করি। মানুষকে নিয়েই তো পথ চলা। আর যাদেরকে নিয়েই দেশের মানুষের কাজ করি তাদের থেকে যেন কোনোমতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই।
তিনি বলেন, আমি যখন সরকারে ছিলাম না তখন এ দেশের মানুষ এবং দলীয় লোক আমার পাশে ছিলেন।
এ সময় এক দরিদ্র রিকশাওয়ালার উপার্জনের সামান্য জমানো অর্থে প্রধানমন্ত্রী ও তার বোনের নামে জমি কেনা এবং তার কাছে হস্তান্তর করতে চাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, অনেকবার তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি শোনেননি। ওই রিকশাওয়ালার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সেই দলিলটা হস্তান্তর করতে চাইলে তিনি নিজে সেখানে গিয়ে তাদের বাড়ি তৈরি করে তার স্ত্রীর হাতে দলিল দিয়ে বলেন, এটা মনে করবেন আমারই বাড়ি, এখন আপনারা থাকবেন।
সরকারপ্রধান বলেন, এই সাধারণ মানুষগুলোর জন্যই আমার রাজনীতি, এদের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জীবনমান উন্নত করাই আমার লক্ষ্য। তাই এসব মানুষের কাছ থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হতে পারি না। কারণ এরাই আমার চলার সব শক্তি জোগায়। এটা সবাইকে মনে রাখার জন্য আমি অনুরোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি যাতে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তার সরকার কাজ করে। এসএসএফের সব সদস্য সার্বক্ষণিক সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশংসনীয় কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে আসছেন। বাংলাদেশে আগত বিদেশিরাও তাদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রশংসা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্যের হার ভবিষ্যতে আরও কমিয়ে আনার এবং অতি-দারিদ্র্য একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা না এলে এরই মধ্যে দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।
তিনি বলেন, যতক্ষণ আমার নিঃশ্বাস আছে আমার এটাই চেষ্টা যে বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে যেন আরও উন্নত সমৃদ্ধ করে যেতে পারি। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরকেও সেভাবেই চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ আমাকে হয়তো একটা কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন, ততক্ষণ আমি বেঁচে থাকবো। কিন্তু, আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন এবং যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাদের জন্য আমি চিন্তায় থাকি। কারণ, যতবার আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে প্রতিবারই আমার কিছু না কিছু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। তারা মানববর্ম রচনা করে আমাকে গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা করেছেন। কাজেই এসএসএফ যেহেতু আমার সবচেয়ে কাছে থাকে, সবসময় তাদেরকে নিয়ে আমি চিন্তিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিবর্তন হয়েছে, সে পরিবর্তনের ধারা বজায় রেখেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
এসএসএফের জন্য যা যা করণীয় তার সরকার করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পরই তিনি তাদের তেজগাঁওয়ে শ্যুটিং প্রাকটিসের জায়গা করে দেন। তাদের অফিসার্স মেস থেকে শুরু করে সবকিছুই ধীরে ধীরে তার হাতে গড়া। লোকবলও তিনিই বৃদ্ধি করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এসএসএফের সবাইকে বলবো যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদানে সবসময় পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সবাইকেই দৃঢ়তা, উন্নত শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক গুণাবলী নিয়েই নিজেদেরকে তৈরি করে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ, নিজের ভেতর যদি দৃঢ়তা না থাকে, সততা না থাকে এবং নিরলসভাবে দায়িত্ব পালনের সেই কর্তব্যনিষ্ঠা না থাকে, তাহলে সফলতা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, এসএসএফ এমন একটি সংগঠন যেখানে আমাদের সব বাহিনীরই প্রতিনিধি রয়েছে। পুলিশ ও অনসার বাহিনী থেকে শুরু করে নৌ, বিমান ও সেনাসহ সব বাহিনীর সমন্বয়ে এই বাহিনী গঠিত। একইসঙ্গে কাজ করার এটাও একটা অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতা আমি মনে করি আগামী দিনেও আমাদের দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযানের সাফল্য সেটাও ধরে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন যারা কাজ করতে আসেন তাদের মধ্যে এই অভিজ্ঞতা সঞ্চারিত হয় এবং আমি দেখেছি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।