ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

ফুটো বেলুনের মত হঠাৎ চুপসে গেছেন ভারতের দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একদিন আগেও তাদের মুখে কথার খই ফুটেছে। তুবড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস ও তার নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের। বড় গলায় দাবি করেছেন, বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারা সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু আজ (৪ জুন) ভোট গণনা শুরুর পর মোদি-অমিত শাহের গলার আওয়াজ আর পাওয়া যায়নি।

বেলা ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে, নির্বাচনে বিজেপি ও তার জোট এগিয়ে ছিল ঠিকই, কিন্তু খুব একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা নিয়ে নয়। দল হিসেবে বিজেপি এবং তার জোট এনডিএ’র আসন যে এবার অনেক কমে যাচ্ছে, ইতোমধ্যে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বিজেপি যে এককভাবে সরকার গঠনের মতো সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, সেটিও পরিস্কার হয়ে গেছে। ফলে সরকার গঠন করলেও ওই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে জোরে সহযোগী দলগুলোর দয়াদাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। আর তাতেই হতাশা ও বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে বিজেপি নেতাদের। আর তাদের পালের গোদা নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেছে।

ভারতের লোকসভায় মোট আসন সংখ্যা ৫৪৩টি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি আসনের জয় বা সমর্থন। বিকাল ৫টায় পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে এনডিএ জোট ২৫ আসনে জয়ী ও ২৬৯টি আসনে এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোট ৯ আস জয়ী ও ২২২ আসনে এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে বিজেপি এককভাবে ২৪১ আসনে এগিয়ে ছিল (কয়েকটিতে জয়সহ)। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে বিজেপির ৩২টি আসন কম। তাই সরকার গঠন নির্ভর করবে অন্য দলের সমর্থনের ওপর।

এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই বিশাল জয়ের ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন। দলটির প্রধান শ্লোগানই ছিল-‘আব কি বার, চারশ পার’ (এবার চারশ ছাড়িয়ে যাব)। অতি আত্মবিশ্বাসে অন্ধ নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটকে পরোয়া-ই করতে চায়নি। তাদেরকে ফুঁ মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে। একদিকে ওই শ্লোগানের মাধ্যমে বিরোধী দলকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপে রাখা, তাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরানোর চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি চেষ্টা চালিয়েছে ইন্ডিয়া জোটে ভাঙ্গন ধরাতে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সফলও হয়েছে তারা। ইন্ডিয়া জোট গড়ার কারিগরদের অন্যতম বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা নীতিশ কুমারকে প্রলোভন দেখিয়ে ভাগিয়ে নিয়েছে। সম্ভাব্য কয়েকটি দলের ইন্ডিয়া জোটে যোগদান আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি সংস্থা ইডিকে লেলিয়ে দিয়ে আম আদমি পার্টির প্রধান ও দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে জেলে পুরেছে।

সব আয়োজন শেষে নির্বাচনী প্রচারনায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, নেহেরুসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, মুসলমানদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় কথা বলা, পরোক্ষভাবে হুমকী দেওয়াসহ নানা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে গেছেন মোদি-শাহ জুটি। অমিত শাহ পশ্চিমবাংলায় একাধিক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও তৃণমুল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জীকে নির্বাচনের পর জেলে পাঠানোর হুমকী দিয়েছেন।

আজ ফল ঘোষণার পর একাবারের জন্যেও মোদি বা অমিত শাহের কোনো হম্বিতম্বি শোনা যায়নি। নির্বাচনের ফলাফল বা সরকার গঠন নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। যে মোদি মুহূর্তে মুহূর্তে এক্সে (সাবেক টুইটার) নানা পোষ্ট দিতে পছন্দ করেন, তিনি আজ একটি পোষ্টও দেননি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...