ভারত ও মালদ্বীপের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের বিষয়টি গড়িয়েছে বহুদূর। এ নিয়ে এখন চলছে এক ধরনের ভূরাজনৈতিক খেলা। মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার, আবার সেই মালদ্বীপের কাছেই নৌঘাঁটি স্থাপন- সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত; ঠিক সেই সময় জানা গেল মালদ্বীপকে সামরিক সহায়তা দেবে চীন।
চীনের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মালদ্বীপ। এর ফলে চীন থেকে বিনামূল্যে সামরিক সহায়তা পাবে দ্বীপরাষ্ট্রটি। বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সোমবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এতে বলা হয়, ‘শক্তিশালী’ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বিনামূল্যে সামরিক সহায়তা প্রদানের জন্য সোমবার মালদ্বীপের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু তার দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের প্রথম দলকে প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো।
এনডিটিভি বলছে, মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ঘাসান মাউমুন দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে চীনের আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতা অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর মেজর জেনারেল ঝাং বাওকুনের সঙ্গে দেখা করেন।
মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, মাউমুন এবং মেজর জেনারেল বাওকুন মালদ্বীপে চীনের সামরিক সহায়তা প্রদানের বিষয়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এটি উভয় দেশের শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে চীন ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মালদ্বীপের কাছে নতুন নৌঘাঁটি স্থাপন করতে যাচ্ছে ভারত। দ্বীপরাষ্ট্রটিতে মোতায়েন ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহারের আগেই ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি জানিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী।
গত বছর ভারত-বিরোধী প্রচারণার মধ্য দিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহামেদ মুইজ্জু। এরপরই মালে ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মুইজ্জু এরই মধ্যে তার দেশের মোতায়েন সব ভারতীয় সেনা ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ৭৭ জন সেনাকে প্রত্যাহার করার জন্য ভারতকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দেয়া দুটি হেলিকপ্টার এবং একটি ডর্নিয়ার বিমান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এসব সেনা দেশটিতে অবস্থান করছে।
মালদ্বীপে ক্রমেই চীনের উপস্থিতি বাড়ছে, যা সন্দেহের চোখে দেখছে ভারত। সম্প্রতি দেশ দুটির মধ্যে অদ্ভুত এক কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, যা দিল্লির কৌশলগত স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে