গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট। তারপর মস্কো সফরে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন শি জিনপিং। এরপরই চীনকে নিয়ে চিন্তা বেড়েছে ইইউ-র।
লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যান্ডসবার্গিস বলেছেন, শি জিনপিং যদি একজন ঘোষিত যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ান, তাহলে আমাদেরও চীনকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। চীনের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি এটা করা হয়, ততই ভাল।
তবে ইইউ-র সব সদস্য দেশ এরকম চরম পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে নয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইইউ-র এক আধিকারিক বলেছেন, গত কয়েকবছরে শি ও পুতিন অন্তত ৪০ বার বৈঠক করেছেন। ফলে এখন শি রাশিয়া গিয়ে পুতিনের পাশে থাকার বার্তা দেবেন সেটাই স্বাভাবিক।
ইইউ-র দেশগুলির সাধারণ মনোভাব হলো- চীন এখন রাশিয়ার দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছে। চীন-সহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ এখনো রাশিয়ার কাজকে আগ্রাসন বলেনি। জাতিসংঘে চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে ভোট দেয়নি। তারা রাশিয়ার প্রচারমূলক কথার পুনরাবৃত্তি করেছে।
প্রেসিডেন্ট শি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কে কোনো সীমারেখা থাকবে না। এমনিতেই ইইউ-র সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আগের তুলনায় খারাপ। রাশিয়ার কারণে তা আরো খারাপ হয়েছে।
বেশ কয়েকটি ইইউ দেশ মনে করছে, চীন এবার রাশিয়াতে অস্ত্র বিক্রি করতে পারে। ইইউ-র সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, চীন যে রাশিয়াতে অস্ত্র বিক্রি করতে চায়, এমন কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই।
চীন বিশেষজ্ঞ স্টেক বলেছেন, ‘চীন এখন রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক কার্যকলাপ পুরোপুরি বজায় রেখেছে। রাশিয়া য়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে, তাকেও সমর্থন করেছে চীন। তারা রাশিয়াকে যে টায়ার, চ্রাক, পোশাক ও অন্য জিনিস দিচ্ছে, তা রাশিয়ার সেনা ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু এখনো তারা কোনো অস্ত্র রাশিয়াকে দেয়নি। তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। উইগুর নিয়ে ইইউ-র সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। ফলে চীনও চাপে আছে। ইইউ চীনের উপর কিছু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। তবে ইইউ আরো ব্যবস্থা নিলে তাদের অর্থনীতিতে চাপ পড়বে। ‘
আমেরিকার ডাকে ইইউ এখনো সাড়া দেয়নি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাইছেন, চীনকে কোণঠাসা করতে ইইউ এবার আমেরিকার সঙ্গে হাত মেলাক। কিন্তু ইইউ তার থেকে বিরত থেকেছে।
ইইউ-র দেশগুলির মধ্য়ে চীনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য করে জার্মানি। তারা ও ইইউ-র অন্য বশ কয়েকটি দেশ চীনের লাভজনক বাজার থেকে চলে আসতে রাজি নয়। তবে দুই তরফের মধ্যে সন্দেহ আছে, চীন ও ইইউ একে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ইইউ-চীন কম্প্রিহেনসিভ ইনভেস্টমেন্ট এগ্রিমেন্টও ঠান্ডা ঘরে চলে গেছে।
স্টেক বলেছেন, ‘চীন এখন চাইছে, তারা ইইউ-র উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ইইউ-ও একইভাবে নিষেদাজ্ঞা তুলবে। তারপর চুক্তিতে সই হবে।’
ইইউ সূত্র জানিয়েছে, ইইউ দেশগুলি চীন নিয়ে বিভক্ত। কিছু দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চায়. আবার কিছু দেশ আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে। সূত্র: ডিডাব্লিউ