চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনী থেকে চাকরি হারানো ২৩০ জন কর্মকর্তা। আর অবসরে যাওয়া সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেরা থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এসব দাবি করেন।
সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, শেখ হাসিনা সরকার সেনাবাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তাকে দানব বানিয়েছিল। তাঁদের কয়েকজনকে ছাড়া পুরো সশস্ত্র বাহিনী ছিল সরকারে প্রতিপক্ষ। তিনি (শেখ হাসিনা) একদিকে যেমন সশস্ত্রবাহিনীকে প্রতিপক্ষ বানান, ঠিক অন্যদিকে পুলিশকে শক্তিশালী করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান।
রাওয়া রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি ফোরামের (আরআরএসএফ) আয়োজনে ‘জুলাই–আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং বিপ্লবোত্তর ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব আলোচনা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিমুল গনি (অব.), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ, লেফটেন্যান্ট আবু রুশদসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন অবসরপ্রাপ্ত শতাধিক কর্মকর্তা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন অধ্যাপক মাহবুবুল্লাহ, অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান, ডা. জাহেদ উর রহমান। আলোচনা শেষে বঞ্চনার শিকার দাবি করে অবসরপ্রাপ্ত ও বরখাস্ত অনেক কর্মকর্তা বক্তব্য দেন।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর অনন্ত ২৩০ জন কর্মকর্তা চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৮৫ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। কর্মকর্তাদের তালিকা ধরে এই আবেদন ১ সেপ্টেম্বর সেনা সদরের সেন্ট্রাল রেকর্ড অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। একই তালিকা ৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরও জমা দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এখনো সেনাসদর বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে কোনো বার্তা পাননি।
প্রেমঘটিত একটি বিষয়ে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন থেকে চাকরিচ্যুত আমিনুল হক বলেন, তিনি যে অন্যায় করেছেন তা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর কয়েকজনের ১ কোটি ভাগের এক ভাগ। কিন্তু তাঁদের কিছুই হয়নি। লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিয়ে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন ৭৯ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের ক্যাপ্টেন মইন। তাঁকেও ২০২৪ সালে ১ জানুয়ারিতে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এর আগে সকাল ১১টায় শহীদ ছাত্র ও জনতার আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দোয়া মোনাজাত করে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জুলাই–আগস্টে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান নিয়ে কথা বলেন কর্নেল (অব.) মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শান্ত আন্দোলনে সরকার যখন বন্দুক ব্যবহার শুরু করতে থাকে, তখন থেকেই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে নামেন।’ তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি সত্যি দেশে নতুন স্বাধীনতা না আসত, মাঠে নামা এই সিনিয়র জেনারেলরা কোথায় থাকতেন তা সবাই অনুমান করতে পারছেন!’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত এই প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের জনগণের কল্যাণে নানাভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, তাঁরা সবাই দেশের জন্য আবারও কাজ করতে প্রস্তুত। সরকার চাইলে তাঁদের নানা খাতে যোগ করে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। এই সময় তিনি বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেন। এর মধ্যে সীমিত পরিসরে সামরিক ও সিভিল ডিফেন্স প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিপ্লবকে রক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থে ছাত্র মিলিশিয়া ব্রিগেড গঠনের প্রস্তাব দেন। যারা দেশ সংস্কারের বাধা দিচ্ছেন তাঁদের ধরে ধরে ভাসান চরে পাঠাতে অনুরোধ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে মুক্ত আলোচনার সময় সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত কয়েকজন কর্মকর্তা বক্তব্য দেওয়ার জন্য হইচই শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বক্তব্য দিতে এসে গ্রেপ্তার মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, বরখাস্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোয়াহেল, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমানের কঠোর সমালোচন করেন। তাঁরা বলেন, এঁদের জন্যই প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) কার্যালয় আয়না ঘর হিসেবে পরিচিত পেয়েছে ও সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে তাঁদের বিচার করতে সরকার প্রধানকে অনুরোধ করেন তাঁরা।