চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে প্রকাশিত আইএমএফের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
গত সেপ্টেম্বরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসের বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়ার পাশাপাশি আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২৮ সালে তা ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামতে পারে।
এ ছাড়া চলতি হিসাবে ভারসাম্যে ঘাটতি অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। তারা বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিশ্ব অর্থনীতি। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানি বাজার বিঘ্নিত হয়েছে; সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার অভূতপূর্ব হারে বাড়ানো হয়েছে—এসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি।
আইএমএফ বলেছে, প্রবৃদ্ধি যে সবখানে একই হারে হচ্ছে তা নয়; সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতানৈক্য বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বলে মন্তব্য করেছে আইএমএফ; দৌড়াচ্ছে না।
মূল্যস্ফীতির হার অভূতপূর্ব উচ্চতায় উঠে গেলে গত বছরের শেষ বিশ্ব অর্থনীতির কার্যক্রম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে, যদিও মূল্যস্ফীতির হার ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে। তবে মহামারি আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান দেশগুলোয়।
এই পরিস্থিতিতে আইএমএফের পূর্বাভাস, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশে নেমে আসবে; আগের বছরে যা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে তা ২ দশমিক ৯ শতাংশে নামতে পারে। এটা ঐতিহাসিক গড় মানের চেয়ে কম।
তবে চলতি বছর সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হারও কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ; আগের বছরে যা ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ। সেই সঙ্গে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য ব্যতীত মূল্যস্ফীতির যে হিসাব, সেই মূল্যস্ফীতির হারও কমে আসবে।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দা হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থনীতির বিশেষ ক্ষতি না করে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রেকর্ড হারে নীতি সুদহার বাড়ালেও বেকারত্ব তেমন একটা বাড়বে না বলেই পূর্বাভাস। ২০২৫ সালে এই হার সামান্য বেড়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
তবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় উন্নত দেশগুলোয় অর্থনীতির গতি আরও কম। আবার উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা বেশ চাঙা হলেও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতির গতি কম। আবার চীন ব্যতীত অনেক উদীয়মান দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।