পণ্য খালাস কার্যক্রম ধীরগতিতে চলায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে কনটেইনারবাহী জাহাজগুলোকে বেশি সময় ধরে অবস্থান করতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি জাহাজকে বন্দরের জেটিতে বার্থিং নিতে ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর বাড়তি এ সময়ের জন্য বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ণের পাশাপাশি দিনে অন্তত ২০ হাজার ডলার জরিমানাও গুনতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের।
নানামুখী জটিলতায় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে যেমন কনটেইনারের স্তূপ জমছে, তেমনি জাহাজের জট সৃষ্টি হচ্ছে বন্দরের বহির্নোঙরে। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বন্দরের জেটিতে ১০টি কনটেইনারবাহী জাহাজ অবস্থান করছিল। এর পাশাপাশি জেটিতে বার্থিং পেতে বহির্নোঙরে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৯টি জাহাজ।
গত দুসপ্তাহ ধরেই বার্থিং পেতে প্রতিটি জাহাজের সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ দিন; কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারচেয়েও বেশি। অথচ আগে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বার্থিংয়ের সুযোগ পেতো পণ্যবাহী বিদেশি জাহাজগুলো।
সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রুহুল আমিন তরফদার বলেন, গত দেড় মাসে বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় যোগাযোগব্যবস্থায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। এতে সময়মতো পণ্য খালাস করতে পারেননি আমদানিকারক ও রফতানিকারকরা। ফলে বন্দরে কিছুটা জট সৃষ্টি হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে বন্দরের বহির্নোঙরে ৯ থেকে ১৪টি কনটেইনারবাহী জাহাজ অবস্থান করছে। এর মধ্যে গিয়ারলেস অর্থাৎ ক্রেনবিহীন জাহাজগুলোকেই বেশি অপেক্ষায় থাকতে হয়। চাল, ডাল, গম, লোহার স্ক্র্যাপ ও সিমেন্ট ক্লিংকারের মতো খোলা পণ্য বহির্নোঙরে খালাস করা গেলেও কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে জাহাজগুলোকে বন্দরের জেটি ব্যবহার করতে হয়।
বর্তমানে বন্দরের জিসিবিতে ৫টি, সিসিটিতে ২টি এবং এনসিটিতে ৪টি কনটেইনারবাহী জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে। সিসিটি এবং এনসিটিতে গ্যান্টিক্রেনের সুবিধা থাকলেও জিসিবিতে গিয়ারলেস ভ্যাসেল বা জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ থাকছে। তাই আধুনিক গিয়ারলেস জাহাজগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এসএসসি শিপিংয়ের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় সময়মতো পণ্য খালাস করা যায়নি। এতে একদিকে যেমন বন্দরে পণ্যের জট বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জাহাজগুলোর খরচও।
এদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বন্যার কারণে স্থবির হয়ে পড়া ডেলিভারিতে গতি আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একই সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির চাপ বাড়ায় সেই গতি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ৫৩ হাজার ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে কনটেইনার রয়েছে ৩৮ হাজার ২৫০ টিইইউএস। ক্রেন এবং কন্টেইনারবাহী লরি চলাচলের জন্য অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়।
এ অবস্থায় প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কনটেইনার ডেলিভারি দিয়ে জাহাজের গড় অবস্থানকালীন সময় ৮ দিন থেকে নামিয়ে চার দিনে আনা হয়েছে বলে দাবি বন্দরের। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রম কমে গিয়েছিল গত দেড় মাসে। এতে জাহাজগুলোকে বেশি সময় ধরে বন্দরে অবস্থান করতে হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে জট কাটছে, পণ্য খালাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯৩ শতাংশ সম্পন্ন হয় এ বন্দর দিয়েই।