সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঝোড়ো বাতাসে গাছ পড়ে দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ।

রোববার (২৬ মে) রাতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে ১৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর বিদ্যুৎ কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পরপরই যেন দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায় সেই লক্ষ্যে প্রতিটি কর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি। পটুয়াখালীতে ছয় লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বাগেরহাটে সাড়ে ৪ লাখ, ভোলায় ৪ লাখ ২৫ হাজার এবং পিরোজপুরে ৩ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার সুশান্ত রায় জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাইকে স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে যেন তা ঠিক করা যায়, এজন্য প্রয়োজনীয় মালামাল বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, আমরা জুম মিটিং করে প্রতিটি অফিসে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছি। আমরা সাধারণত তিন ধরনের প্রস্তুতি নিই, ঝড় আসার আগে ও ঝড়ের সময় এবং ঝড়-পরবর্তী সময়ে করণীয়।

তিনি বলেন, ঝড় আসার আগে আমরা মোবাইলে চার্জ দিয়ে রাখতে বলি সবাইকে, মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করে রাখা হয়। যারা স্ট্যান্ডবাই থাকবেন, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে ঝড়ের সময় যেন কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হয়, সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমরা চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রাখছি। যেন তাদের এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপরে গাছ পড়লে, সরাসরি যোগাযোগ করা যায়।

রাতে আবহাওয়ার ১৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *