মাসের পর মাস উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। বেড়েছে আয়বৈষম্যও। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অধিকাংশ পরিবার তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। অনেক পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্রামের তুলনায় শহরের দরিদ্র মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বেশি।
‘করোনা মহামারি ও পরবর্তী প্রতিবন্ধকতা কীভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্য, আয়বৈষম্য, শিক্ষা এবং খাদ্য সুরক্ষার ওপর প্রভাব ফেলছে’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে।
মঙ্গলবার গবেষণার ফলাফল নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মৌলিক চাহিদার খরচের ভিত্তিতে উচ্চ দারিদ্র্যসীমা ব্যবহার করে দেখা যায়, ২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে বা সারাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। যেটি ২০১৮ সালে ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। গত বছর গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে শহর এলাকায়। শহর এলাকায় ২০১৮ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ হার বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। গ্রামীণ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে তা ২০১৮ সালের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে।
শহর এলাকায় দারিদ্র্য বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে সানেম ও গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌলিক চাহিদার খরচভিত্তিক দারিদ্র্য এবং বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পদ্ধতি উভয় ক্ষেত্রেই শহরে দারিদ্র্য বাড়ার পেছনে দুটি কারণ অনুমান করা যাচ্ছে।
প্রথমত, নাজুক দরিদ্রদের একটি বড় অংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। তাদের অনেকে দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচতে অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি কারণে শহরে স্থানান্তরিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির মতো উল্লেখযোগ্য ধাক্কাগুলো এই নাজুক লোকদের ফের দারিদ্র্যসীমার নিচে নামিয়ে থাকতে পারে। নাজুক দরিদ্র বলতে দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও যে কোনো বড় অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রভাব তাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে নামিয়ে দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, শহুরে এলাকাগুলো বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপকভাবে আওতাভুক্ত নয়। এর ফলে অনেক শহুরে পরিবার অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ থাকে।
সানেমের প্রতিবেদন অনুসারে, অতি দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়, গ্রাম ও শহর সব জায়গাতেই গত পাঁচ বছরে খানিকটা উন্নতি হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে এই অতি দারিদ্র্যের হার ২০১৮ সালের ৯ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে।