তীব্র গ্যাস সংকটে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চট্টগ্রামের ভারি শিল্প কারখানাগুলোর উৎপাদন। শিল্প মালিকদের দাবি, গ্যাস সংকটে এক একটি ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়ও। এমনকি বন্ধ রাখতে হচ্ছে অনেক কারখানা।
বিস্তৃত সমতল ভূমি ও বন্দরকে কাজে লাগিয়ে গত পাঁচ দশকে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে লৌহ, সিমেন্ট, কাঁচ ও জাহাজ ভাঙার মতো ভারি শিল্প-কারখানা। প্রায় ১ হাজার ২০০ ভারি শিল্প কারখানার মধ্যে ডজনখানেকের বেশি রয়েছে ইস্পাতের। একই সঙ্গে আছে সিইউএফএল, কাফকো ও ডিএপি সার কারখানাও। এছাড়া রয়েছে চারটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ গার্মেন্টস কারখানা।
কিন্তু গ্যাসের চরম সংকটে এসব কারখানা যেমন মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখতে হচ্ছে, তেমনি এসব শিল্প কারখানাকে সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদনে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এবিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে কেএসআরএমের স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডের পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, গ্যাসের সরবরাহ যখন বন্ধ হয়ে যায় বা ঘাটতি দেখা দেয়, তখন আমাদের বাধ্য হয়ে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করতে হয়। এতে ব্যাপক পরিমাণে লোকসান গুণতে হয়। আমাদের সক্ষমতাও কমে যায়, পণ্য উৎপাদনে বেশি সময় লাগে। ফলে আমরা আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে। যা দিনশেষে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। ফলে পণ্যের দামও বেড়ে যায়।
গ্যাস সংকটে হুমকির মুখে দেশের রফতানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পও। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় যথাসময়ে শিপমেন্টে দুঃশ্চিন্তায় গার্মেন্টস মালিকরা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আমদানি করা এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) উপর নির্ভর না হয়ে জাতীয় গ্রিড থেকেও চট্টগ্রামে বিকল্পভাবে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার দাবি করছেন তারা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ না করতে পারি, তাহলে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হবে। লিড টাইম মিস করলে আমাদের পণ্যমূল্যে ছাড় দিতে বাধ্য হতে হবে বা ক্রেতা ক্রয়াদেশ বাতিলও করে দিতে পারে। যেহেতু এলএনজি আমদানির মাধ্যমে আমাদের গ্যাসের সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে, সেহেতু সরকারকে অনুরোধ করব জাতীয় গ্রিড থেকেও যেন চট্টগ্রামবাসীকে কিছু গ্যাসের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
গ্যাস নিয়ে শিল্প কলকারখানাগুলোর টালমাটাল অবস্থা হলেও এ নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বললেন বিপণনকারী সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, গ্যাসের প্রেশারের এখন কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সাধারণ যেসব গ্রাহক রয়েছে- শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও বাসাবাড়ি, তাদের স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। তবে যারা বাল্ক গ্রাহক, যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা, সেগুলোর মধ্যে কাফকোকে স্বল্প পরিমাণ করে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। কারণ ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে। সূত্র সময়টিভি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে মোট গ্যাসের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে শিল্পকারখানায় দৈনিক চাহিদা ৮ থেকে ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের। এর মধ্যে চাহিদার দুই–তৃতীয়াংশ পরিমাণ গ্যাসও পাচ্ছে না কারখানাগুলো।