রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন পাবনার খামারি রুবেল আহমেদ। তিনি শনিবার (২৪ জুন) হাটে গরু আনলেও সোমবার (২৬ জুন) রাত পর্যন্ত মাত্র তিনটি বিক্রি করতে পেরেছেন। এর মধ্যে দুটি গরুই আকারে ছোট, ওজন তিন মণের কাছাকাছি। আরেকটি গরুর ওজন ছিল প্রায় সাড়ে ৪ মণ। বাকি ১১টি গরুর ওজন ৬ থেকে ৮ মণের মতো। সেসব গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই খামারি।
রুবেল আহমেদ জানান, ছোট দুটি গরুর একটি ৯২ হাজার ও অন্যটি ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। মাঝারি আকারের গরুটি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকায়। ৬ থেকে ৮ মণ ওজনের মোটামুটি বড় আকারের যে গরুগুলো আছে, তাতে ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আগামীকাল বুধবারের মধ্যে সবগুলো গরু বিক্রিন আশা করছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল আছে। তবে, ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। উপরন্তু, গতকাল রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকবার বৃষ্টির কারণে হাটে কাদা পানি জমে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকায় পশু ব্যবসায়ী ও পাইকারদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
কবির নামের এক খামারি বলেন, ক্রেতার সংখ্যা কম। একেকজন যে দাম বলছেন, শুনেই বোঝা যাচ্ছে, তারা কিনবেন না। অনেক গরুর যে দাম বলে, তার দ্বিগুণ দামে কিনে এনেছি বা খরচ পড়েছে। আকাশের অবস্থা ভালো নয়। এদিকে, পরশুদিন ঈদ। আল্লাহ জানেন, কী হবে এবার!
হাট ঘুরে দেখা যায়, যেসব ক্রেতা গরু কিনেছেন, তার বেশিরভাগ গরুই আকারে ছোট। দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এবার গরুর দাম গত বছরের তুলনায় যথেষ্ট বেশি বলে জানান ক্রেতারা। যদিও হাটে যথেষ্ট পরিমাণে গরুর সরবরাহ আছে। তবু, আজ পর্যন্ত খামারি বা বিক্রেতারা দাম কমাচ্ছেন না।
গাবতলী পশুর হাটের হাসিল গ্রহণকারী খোকন মিয়া জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ছোট আকারের ৫৮টি গরু, মাঝারি আকারের ১২টি গরু বিক্রি হয়েছে। বড় কোনো গরু (৩ থেকে ৮ লাখ) এ সময়ের মধ্যে বিক্রি হয়নি।
তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো না। রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। এবার প্রচুর গরু থাকলেও সে পরিমাণে ক্রেতা নেই। তবে, আজ বিকেল বা কালকের মধ্যে আশানুরূপ পরিমাণে বিক্রি হতে পারে।
গাবতলী থেকে ছোট আকারের দুটি গরু ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় কিনেছেন পাইকপাড়ার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম। তিনি জানান, এবার গরুর দাম গতবারের তুলনায় অনেক বেশি। বিক্রেতারা প্রতিটি গরুতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি চাইছেন। তার কেনা দুটি গরুতে গত বছরের তুলনায় অন্তত ৩০ হাজার টাকা বেশি লেগেছে।
হাটে কম-বেশি সব আকারের গরুই আছে। ছোট ও মাঝারি গরুর সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি এসব গরু বিক্রিও হচ্ছে বেশি। এই হাটে ১২ থেকে ১৫ হাজার গরু রাখার ব্যবস্থা আছে।
নেত্রকোনা থেকে আসা বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, একটা গরুতে ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হলেই ছেড়ে দিচ্ছি। গরু এনেছি ৮টা। চারটা বিক্রি হয়েছে। আশা করছি বাকিগুলো আজ-কালের মধ্যে বিক্রি হবে। সব খরচ বাদে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হলেই হবে। কাল দুপুর নাগাদ বেচা শেষ হলে বিকেলে বাড়ি চলে যাব। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ঈদ করব।
দুপুর ২টার দিকে হাট থেকে দুজন ক্রেতাকে গরু কিনে ফিরতে দেখা গেছে। একজন এসেছেন সাভারের হেমায়েতপুর থেকে। আরেকজন কল্যাণপুর থেকে। হেমায়েতপুরের ক্রেতা রাকিবের কেনা গরুটির দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তিনি জানান, দাম চেয়েছে ২ লাখ। অনেক বেশি দাম চেয়েছিল। দাম কমাতে চায়নি। সময় নিয়ে দরদাম করে শেষে কিনেছি। এবার গরুর দাম অনেক বেশি।
কল্যাণপুরের ক্রেতা সেলিমুর রহমান গরু কিনেছেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, এই গরুর দাম চেয়েছে দেড় লাখ টাকা। অনেক ঘুরে এটাই পছন্দ হয়েছে। আমার ছেলেরও পছন্দ হয়েছে।