ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মৃতদেহ গাজার একটি মেডিকেল কম্পাউন্ডের উঠানে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের একটি স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। ভূখণ্ডটির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ওই স্কুলে চালানো হামলায় তারা প্রাণ হারান। হামলার শিকার এই স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত লোকেরা আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজার একটি স্কুলে হামলায় মঙ্গলবার অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। চলমান যুদ্ধের কারণে ওই স্কুলটিতে বহু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের মাআন স্কুলের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কয়েক ডজন আহত ব্যক্তি এবং মৃতদেহ উদ্ধার করে শহরের নাসের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
খান ইউনিস হচ্ছে গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। গত বেশ কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই শহরটিতে তীব্র বোমাবর্ষণ করে চলেছে।
মোহাম্মদ সালো নামে এক ব্যক্তির বোন মঙ্গলবারের হামলায় নিহত হয়েছেন। তিনি এএফপিকে বলেছেন: ‘আমার চাচাতো ভাই ফোন করে আমাকে আসতে বলে, কারণ আমার বোনের লাশ স্কুলের উঠানে পড়ে ছিল এবং আমরা তা উদ্ধার করতে পারিনি।’
অবশ্য তিনি শেষ পর্যন্ত লাশ হাসপাতালে নিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে জানান। সালো বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ‘কেবল স্কুলটি নয়, আশপাশের এলাকাও ছিল হামলার লক্ষ্যবস্তু’।
এছাড়া মঙ্গলবার খান ইউনিস এবং কেন্দ্রে অবস্থিত নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় আরও ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আগের দিন সোমবার উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে দু’টি স্কুলে বোমা বর্ষণ করেছিল ইসরায়েল, সেই অভিযানেও নিহতের সংখ্যা ছিল ৫০ জন।
ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে ৪০ জন খান ইউনিস শহরের এবং ১০ জন নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সোমবার স্কুলে বোমা বর্ষণের পাশাপাশি গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শরণার্থী কেন্দ্র জাবালিয়া ক্যাম্পেও বোমা ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। এতে অন্তত ১০৮ জন নিহত এবং কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি আহত হন। আহতদের শিবিরের নিকটবর্তী কামাল আদওয়ান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জ্বালানির অভাবে গত বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালটিতে বিদ্যুৎ নেই। উপরন্তু ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অব্যাহত বোমা ও ড্রোন হামলায় ঘরবাড়ি হারিয়ে হাসপাতালটির চত্বরে আশ্রয় নিয়েছেন ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই হামলা থেকে বাদ যায়নি গাজার স্কুল, মসজিদ এমনকি হাসপাতালের মতো স্থাপনাও।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সতর্কতা সত্ত্বেও গাজার স্কুলে আবারও ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটল।