নভেম্বর ৮, ২০২৪

এক পা পুরো রক্তাক্ত, চেহারা ও হাতের বিভিন্ন স্থানে আঘাত। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে ১০-১২ বছরের এক মেয়ে। সে চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলছিল, আমাকে ছেড়ে যেও না। কিন্তু চিকিৎসকদের কিছুই করার ছিল না। কারণ, তাঁর চেয়েও গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে আনা হচ্ছে শত শত শিশুসহ নানা বয়সী মানুষকে। হাসপাতালে আনার পর অনেকে মারা যাচ্ছেন। সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে অসংখ্য লাশ ফেলে রাখা হয়েছে ট্রলিতে। এমন বিবর্ণ দৃশ্য এখন ফিলিস্তিনের গাজার আল-শিফা হাসপাতালের।

অন্যদিকে, গাজা শহরের আল-নাসেরে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র বানানো হয়েছে। সেখানে অবস্থান নেওয়া পরিবারের শিশুরাও চরম আতঙ্কিত। যখনই কোনো বিমানের গর্জন শুনতে পায়, তখনই অবাক চোখে আকাশের দিকে তাকায় তারা। তাদের আশঙ্কা, এই বুঝি হামলা হলো। তাদের জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যায়, কোন ধরনের বিমান মাথার ওপর দিয়ে উড়ছে, অথবা কেমন বোমা সবেমাত্র বিস্ফোরিত হয়েছে। যুদ্ধের এসব বিধ্বংসী শব্দের সঙ্গে তারা পরিচিত। গত ৭ অক্টোবর বিকেলেই তাদের খেলাধুলা ও আনন্দ শেষ হয়ে যায়।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা ফিলিস্তিনের একটি সংস্থার তথ্যমতে, হামলা চালিয়ে গত এক সপ্তাহে ৭২৪ জন শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। বড়দের মতো এই শিশুরাও বুঝে গেছে, ইসরায়েলি বোমা হামলা তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে শৈশব আর আনন্দ। গাজার শিশুদের বয়স এখন হিসাব করা হয়, সে কতটি ইসরায়েলি হামলার সাক্ষী।

গাজা শহরের চার সন্তানের মা সামাহ জাবরের বড় ছেলে কুসায়েরের বয়স ১৩ বছর। তাকে নিয়ে তিনি চিন্তিত। কারণ, তাঁর ছেলে কোনো শব্দই সহ্য করতে পারছে না। তাকে বোঝাতে চান, এই যুদ্ধ শেষ হবে। স্বাভাবিক রাখতে যতবার সম্ভব কুসেকে জড়িয়ে ধরেন। জাবর বলেন, মিসাইলের শব্দ ভয়ঙ্কর। আমাদের ঘর খুব জোরে কেঁপে ওঠে।

সন্তানদের তিনি শিখিয়েছেন, কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্রের আলো শনাক্ত করতে হয়। যাতে করে বিকট শব্দে শ্রবণশক্তি হারানো থেকে বাঁচা যায়।

রাফাহ শহরের দক্ষিণাঞ্চলে আহলাম ওয়াদি বলেন, তাঁর ১০ বছর বয়সী ছেলে হাতে কান চেপে ধরে ঘুমাচ্ছে। তিনিও সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত বলে জানান।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, হাজার হাজার শিশু এবং তাদের পরিবার উত্তর গাজা থেকে পালিয়েছে। যুদ্ধের এক সপ্তাহে শতাধিক শিশু নিহত ও হাজার হাজার আহত হয়েছে। ইউনিসেফ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। গাজার শিশু ও পরিবারগুলো খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ এবং হাসপাতালের নিরাপদ যাতায়াত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উত্তর গাজার ১.১ মিলিয়ন মানুষের প্রায় অর্ধেক শিশু।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। শহরের শিশু এবং পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের অনুমতির জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক প্রবেশাধিকার এখন সবচেয়ে জরুরি। তারা যেখানেই থাকুক, অভাবগ্রস্ত শিশুদের কাছে নিরবচ্ছিন্ন এবং নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে মানবিক বিরতি প্রয়োজন। যুদ্ধের নিয়ম আছে। গাজার শিশুদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার প্রয়োজন।

৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণ অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সবচেয়ে বড় হামলা ছিল। তাদের হামলায়ও অনেক ইসরায়েলি শিশু মারা গেছে। বেশ কিছু বেসামরিক মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে। এসব ঘটনার পর ইসরায়েল বড় প্রতিক্রিয়া দেখাবে– এটা ভেবে নিয়েছিল ফিলিস্তিনিরা। এরপর ইসরায়েলি বোমা হামলার লক্ষ‌্যবস্তু করা হয় আবাসিক ভবনগুলোকে। নির্বিচার হামলায় গাজা এখন মৃত্যুকূপে

পরিণত।

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...