গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আজ বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি। খবর রয়টার্সের।
লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি জানিয়েছে, মাসব্যাপী ঘটনাবলি বিশ্লেষণ এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্য পর্যালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এই অপরাধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত মানদণ্ড পূরণ হয়েছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রথমবারের মতো এই কথা জানাল অ্যামনেস্টি।
১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো জাতি, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত কাজকে গণহত্যা বলা হয়। তবে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাদের দাবি, দেশটি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলেছে। হামাসের হামলার পর তাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের বিষয়ে ইসরায়েলের অবস্থান জানতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।
দ্য হেগে সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, এই সিদ্ধান্ত হালকা, রাজনৈতিক বা পক্ষপাতমূলকভাবে নেয়া হয়নি। একটি গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। ছয় মাসের গভীর ও নিবিড় গবেষণার পর এ নিয়ে আমাদের মনে এক বিন্দু সন্দেহ নেই।
এ ছাড়া গত বছর গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যা মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির এই মামলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্ত হয়েছে। তবে এই বছরের শুরুর দিকে আইসিজের এক শুনানিতে ইসরায়েলের আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের দাবি, ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনায় কোনো গণহত্যার উদ্দেশ্য নেই। তারা কোনো গণহত্যা করেনি। বরং তাদের উদ্দেশ্য হামাসকে নির্মূল করা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা ছাড়াও প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস। একই দিন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় নির্বিচারে বোমা ও স্থল হামলা করে আসছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় এই পর্যন্ত সাড়ে ৪৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক লাখের বেশি মানুষ।
গত নভেম্বরে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাতদিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির আওতায় হামাস শতাধিক ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তিও দেয়। তবে এখনো তাদের হাতে শতাধিক ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে।