লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েল যুদ্ধ চায় না; চলমান উত্তেজনা নিরসনে তেল আবিব একটি কূটনৈতিক সমাধান চায়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্যালেন্ট এ তথ্য ‘নিশ্চিত’ করেছেন।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে দুই পক্ষের স্বার্থে একটি কূটনৈতিক সমাধান ‘সম্ভব’।
গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা আনাদলুর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ ধরনের সমাধান আদৌ তেল আবিব মেনে নেবে কিনা– তা নিয়েও কথা বলেছেন মিলার। তিনি জানান, ইসরায়েলের মন্ত্রী তাঁকে নিশ্চিত করেছেন যে, তারা সর্বাত্মক যুদ্ধ চান না। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে তারা কূটনৈতিক সমাধান চান। এতে লাখ লাখ ইসরায়েলি পরিবার তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। এ নিয়ে ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে মিলার বলেন, ইসরায়েলে সরকারের মধ্যে নানা মতের লোকজন আছেন। তাদের সবার সঙ্গে তো তিনি নিশ্চিতভাবে আলাপ করতে পারেননি।
গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলে হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। এতে ইসরায়েল সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের ৬২ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়। পাশাপাশি লেবাননের অভ্যন্তরে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ কোম্পানি নোগার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাউল গোল্ডস্টেইন সতর্ক করে বলেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রও চাইছে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যাতে ইসরায়েলের যুদ্ধ না বাধে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েল ও লেবাননের বেসামরিক মানুষ যাতে তাদের ঘরবাড়িতে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য কাজ করছে ওয়াশিংটন। এ অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। বুধবার একদিনে গাজায় আরও ৬০ জন নিহত হয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৭১৮ ফিলিস্তিনি; আহত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৩৭৭ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন আরও কয়েক হাজার। এ অবস্থায় ইসরায়েলের কাছে ভারত রকেট ও বিস্ফোরক বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার আলজাজিরা লিখেছে, গত ১৫ মে কার্গো জাহাজ বরকুম স্পেনের উপকূলে থামে। তখন ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা কর্তৃপক্ষকে জাহাজটিতে তল্লাশি করতে বলেন। এতে ইসরায়েলগামী অস্ত্র পাওয়া যায়। এ নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বামপন্থি সদস্যরা স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সানচেজের কাছে পত্র লিখে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার দাবি জানান। পরে জাহাজটি স্লোভানিয়ার কোপার বন্দরে যায়।
আলজাজিরা জানতে পেরেছে, ওই জাহাজে রকেট ও বিস্ফোরক বোঝাই করা হয় ভারত থেকে। এটি ইসরায়েলের আশদদ বন্দরে পৌঁছানোর কথা। জাহাজটি চেন্নাই থেকে রওনা হলেও হুতির হামলার ভয়ে লোহিত সাগর এড়িয়ে গেছে।
এদিকে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজার অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেখানে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যার হালনাগাদ করা হলেও প্রকৃত মৃত্যু আরও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। সিএনএন লিখেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। অভুক্ত ও অপুষ্ট শিশুরা মারা যাচ্ছে তাদের বাবা-মায়ের কোলেই।
দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতালে শুয়ে আছে ছোট্ট ইউনিস। তার নীল চোখ যেন বেরিয়ে আসছে; হাড্ডিসার শরীর। ৯ বছরের শিশুটি প্রচণ্ড অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় ভুগছে। তার মা গানিমা জুমা বলেন, ‘আমি চোখের সামনেই আমার ছেলেকে হারিয়ে
ফেলছি।’