সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

দেশে খোলাবাজারে নগদ ডলারের দামে হঠাৎ অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ঢাকার খোলাবাজারে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১২৪-১২৫ টাকায় উঠেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ডলারের দাম ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে ছিল। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত খোলাবাজারে প্রভাব পড়েছে।

খোলাবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ফেরার সময় প্রবাসীরা নিজেদের সঙ্গে করে যে ডলার নিয়ে আসেন, সেগুলো খোলাবাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে মানুষ আসা কমে যাওয়ায় ডলারের সরবরাহও কমেছে। এতেই ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে দাম বেড়ে গেছে।

বাড়ল ডলারের দাম

জানা গেছে, খোলাবাজারে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি ডলার ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হতো। নগদ ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে এ রকম ধারাতেই ছিল। তবে ছাত্র আন্দোলনের পর গত সোমবার তা বেড়ে ১২২ টাকায় ওঠে, যা গতকাল ১২৫ টাকায় পৌঁছায়।

রাজধানীর মতিঝিলের খোলাবাজারের ডলার বিক্রেতা মো. শাহজাহান বলেন, হাতে হাতে যে ডলার আসছে, তার দাম চড়া হয়ে মঙ্গলবার ১২৪ টাকার ওপরে উঠেছে। কারণ, ডলারের জোগান কমে গেছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা আগের দামেই ডলার বিক্রি করছে। বেসরকারি সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে গতকাল প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো পরিচিত গ্রাহক ছাড়া অন্যদের কাছে তেমন ডলার বিক্রি করছে না।

প্রবাসী আয়ে ধাক্কা

দেশে গত সপ্তাহে প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ২১ থেকে ২৭ জুলাই—সাত দিনে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১৯-২৩ জুলাই সময়ে সরকারি ছুটি ও সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ১০ দিন মোবাইলে ইন্টারনেট–সেবা ছিল না। পাশাপাশি ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ৪০-৫০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। এর মধ্যে ১-২০ জুলাই ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, আর ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একটি সূত্র জানায়, ১-২৮ জুলাই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চলতি সপ্তাহে প্রবাসী আয় বাড়বে, এমনটাই আশা করছে সূত্রটি।

প্রবাসীরা গত মাসে (জুনে) দেশে ২৫৪ কোটি ডলার আয় পাঠান, যা গত তিন বছরের মধ্যে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। টানা পাঁচ দিন লেনদেন বন্ধ থাকার পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। সেদিন আবার বৈশ্বিক লেনদেন সিস্টেম সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক ব্যাংকে কোনো প্রবাসী আয়ের অর্থ আসেনি। তবে পরদিন থেকে স্বাভাবিক বৈশ্বিক লেনদেনে ফেরে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় দেশে পাঠালে ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের প্রবাসী আয় প্রেরণকারী রেমিট্যান্স হাউসগুলো যদি এ আয় ধরে রাখে, তাহলে তা দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণত দু-তিন দিনের বেশি দেরি হয় না।

এদিকে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশের শীর্ষ এক ডজন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) ডেকে নিয়ে প্রবাসী আয় বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রতি ডলার ১১৭-১১৮ টাকা দরে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে আসছিল। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় তাদের কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও তা বৈধ পথে দেশে আনতে বলা হয়েছে। ফলে অনেক ব্যাংকই এখন ১২০ টাকা দামেও প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে বলে দুবাই ও মালয়েশিয়াভিত্তিক রেমিট্যান্স হাউসগুলোর সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *